নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বর্তমান সরকার বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণসহ সার্বিক পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে সফল হতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একটি সবুজ ও সোনার বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।
বুধবার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে “প্রাণ বাঁচাতে ওজোনঃ ওজোনস্তর সুরক্ষার ৩৫ বছর” প্রতিপাদ্য ধারণ করে বিশ্ব ওজোন দিবস ২০২০ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মাহমুদ হাসান, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোঃ মিজানুল হক চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ড. এ, কে, এম, রফিক আহাম্মদ এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি প্রমূখ।
এসময় পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ওজোনস্তর রক্ষায় ১৯৮৫ সালের ২২ মার্চ গৃহীত ভিয়েনা কনভেনশন ও ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিল প্রটোকল অনেক সাফল্যে গাথা। ১৯৯০ সনে এ দুটিতে স্বাক্ষরের পর গৃহীত কার্যক্রমের কারনে বিশ্ববাসীর সঙ্গে বাংলাদেশও এই সাফল্যের অংশীদার।
প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশে অন্যতম ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য সিএফসি, হ্যালন, কার্বনটেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফরম ও মিথাইল ব্রোমাইড-এর ব্যবহার বিগত ১ জানুয়ারি ২০১০ সালে রোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১২ সালে ঔষধ শিল্পে ব্যবহৃত অবিশিষ্ট সিএফসি-এর ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে। অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, বাংলাদেশ মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়নের সব কয়টি ধাপ যথাসময়ে সঠিকভাবে অতিক্রম করেছে এবং প্রটোকলের বাধ্যবাধকতা পালনের ক্ষেত্রে সচেষ্ট রয়েছে। ওজোনস্তর সংরক্ষণ ও সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে প্রাণ-মণ্ডল রক্ষায় বিগত ৩৫ বছর পৃথিবীর সকল দেশ যে ভূমিকা রেখেছে তার সমন্বিত ফলশ্রুতিতেই আজ ওজোনস্তর অনেকটাই সুরক্ষিত।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মন্ট্রিল প্রটোকলের আওতায় হাইড্রোক্লোরোফ্লোরোকার্বন (এইচসিএফসি) ফেজ আউট করার কাজ চলছে, যা এয়ারকন্ডিশনার, অগ্নি নির্বাপন ও ফোম সেক্টরে ব্যবহৃত হয়। মন্ট্রিল প্রটোকল সংশোধন করে এগুলোর ফেজ আউট সিডিউল ১০ বছর এগিয়ে আনা হয়েছে। উক্ত এইচসিএফসি এর ফেজ আউটের লক্ষ্যে আমরা এইচসিএফসি ফেজ আউট ম্যানেজমেন্ট প্লান তৈরি করেছি। এইচসিএফসি ফেজ আউটের জন্য এমন সব বিকল্প প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হয়েছে যা একই সঙ্গে ওজোনস্তর এবং জলবায়ু বান্ধব হবে। এ ধরনেরই একটি বিকল্প প্রযুক্তি নিয়ে আমরা অনেকটাই সফলভাবে এগিয়েছি। শুধু ওজোনস্তর রক্ষাকল্পেই নয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও মন্ট্রিল প্রটোকল একইভাবে সাফল্য লাভ করবে। বাংলাদেশ বিগত ৮ জুন মন্ট্রিল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনী অনুস্বাক্ষর করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মন্ত্রী জানান, মন্ট্রিল প্রটোকল অত্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ এবং ২০১৭ সালে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্তৃক বাংলাদেশ প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। এছাড়া ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের অবৈধ অনুপ্রবেশ ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেসনস, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি, এবং ওজোন সেক্রেটারিয়েট কর্তৃক এবছর পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ওজোন সেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুল্লাহ আল মাহমুদকে প্রশংসাসূচক মেডেল ও প্রশংসাপত্র প্রদান করা হয়। বিশ্ব ওজোন দিবস ২০২০ উদযাপন উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর গৃহীত নানা কর্মসূচিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্যান্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণকে ওজোনস্তরের গুরুত্ব ও তা রক্ষার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি অবহিত করা হবে।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ইউএনডিপি ও ইউনেপ উভয়েই পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের সহযোগী। তন্মধ্যে পরিবেশের প্রায় সকল বিষয়ে আমরা ইউএনডিপির সহায়তা পেয়ে থাকি। ওজোনস্তর রক্ষায়ও ইউএনডিপি এযাবৎ আমাদের প্রায় ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। মন্ট্রিল প্রোটোকল একটি সময় সীমাবদ্ধ, আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি। পৃথিবীর সকল দেশ এটি স্বাক্ষর করত: বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বাস্তবায়ন করছে। আমরা এ ব্যাপারে আরো যত্নবান এবং যথাসময়ে এর প্রত্যেকটি বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, দেশের জনগণের সক্রিয় সহযোগিতায় বাংলাদেশ ওজোনস্তর ক্ষয় প্রতিরোধে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে সফল হবে ।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবির, পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মোঃ জিয়াউল হক এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ওয়াল্টনসহ রেফ্রিজারেশন সেক্টরের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।