সুইজারল্যান্ড সরকার পরিচালিত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়প্রার্থীদের উপর নিয়মিত সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। ১৯ মে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সুইজারল্যান্ড শাখা প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কমপক্ষে ১৪ জন ব্যক্তির উপর চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে নিন্দা জানানো হয়।
প্রতিবেদনটি তৈরী করতে অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে মোট ৩২ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে নির্যাতিত ১৪ জন ভুক্তভোগী এবং ১৮ জন বর্তমান ও সাবেক নিরাপত্তা কর্মী। ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্কও রয়েছেন।
তদন্ত চলাকালীন সময় অন্যান্য সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন মেডিকেল রিপোর্ট এবং পুলিশের কাছে থাকা বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের নথিকেও আমলে নেয়া হয়েছে।
স্ট্রোক, অজ্ঞান, চোখে পিপার স্প্রে নিক্ষেপ…..
জানুয়ারি ২০২০ থেকে এপ্রিল ২০২১ এর মধ্যে বাসেল, শেভ্রিলস, বউড্রি, আল্টস্টাটেন এবং ভ্যালোর্ব শহরে অবস্থিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে এসব ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনে আশ্রয়প্রার্থীদের উপর যেসব নির্যাতনের অভিযোগ উঠে এসেছে সেগুলোর মধ্যে শারীরিক আঘাত, গলা চেপে ধরে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি, চোখে মরিচের স্প্রে মারা এবং অত্যন্ত নাজুক কিছু ধাতব কন্টেইনারে আটকে রাখা অন্যতম।
অ্যামনেস্টি জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে ছয়জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল এবং অন্য দুইজন চিকিৎসা নিতে চাওয়া সত্ত্বেও তাদের চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সুইজারল্যান্ডের আইনজীবী অ্যালিসিয়া গিরাডেল বলেন, “শারীরিক নির্যাতন, দুর্ব্যবহার ও শাস্তিমূলক আচরণের পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দাদের উপর বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষত উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত আশ্রয়প্রার্থীদের উপর বর্ণবাদী আচরণের মাত্রা ছিল অত্যধিক।
অ্যামনেস্টির মতে, সংঘটিত অপরাধগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্বরত দুই সংস্থা সিকিরিটাস এসএ এবং প্রোটেক্টাস এসএ-এর কর্মচারীদের মাধ্যমে ঘটেছে। উল্লেখ্য এ দুটি সংস্থা মূলত অভিবাসন বিষয়ক দপ্তর (এসইএম) -এর অধীনে কাজ করে।
কর্তৃপক্ষ যা বলছে
তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সুইজারল্যান্ড সরকারকে আশ্রয় আইনের অপব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উপর জোর দিয়েছে অ্যামনেস্টি। সংস্থাটি বলছে, এসব অন্যায় আচরণের কারণে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হতে পারে যা মেনে চলতে সুইজারল্যান্ড সবসময় দায়বদ্ধ।
অ্যালিসিয়া গিরাডেল বলেন, “এই প্রতিবেদনে বর্ণিত ঘটনার পরে সরকারের সতর্ক হওয়া উচিত। আমরা যেসব ঘটনা তুলে এনেছি এরপর সরকারের এমনটা ভাবা বন্ধ করা উচিত যে সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী অল্প কয়েকজন।”
অভিবাসন বিষয়ক দপ্তর (এসইএম) এর পক্ষ থেকে এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে তারা অভিযোগগুলো খুব গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। তবে আশ্রয়ককেন্দ্রগুলিতে পদ্ধতিগতভাবে এমন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে। “আশ্রয় প্রার্থীদের উপর অযাচিত কোন হস্তক্ষেপকে প্রশ্রয় দেয়া হয় না এবং যেকোন ভুল আচরণের জন্য শাস্তির বিধান আছে”, জানায় এসইএম।
এর আগে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ঘটনা তদন্তের জন্য ফেডারেল কোর্টের এক সাবেক বিচারপতির সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। পর্যাপ্ত তথ্য প্রাপ্তির সাপেক্ষে আরো একটি তদন্ত কমিটি করা হতে পারে বলে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন প্রকাশের পরে জানানো হয়েছে।
সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস