বিশেষ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তথা বিজেপি বিরোধী ভিডিও বৈঠকে বসতে চলেছে দেশের বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেসের আহ্বানে ওই বৈঠক হবে শুক্রবার বিকেল তিনটেয়। অংশ নেবে দেশের ১৮টি অবিজেপি দল। বৈঠকের নেতৃত্ব দেবেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। যদিও বিরোধীদের দাবি, দেশের বর্তমান করোনা অতিমারী, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা, কোনও কোনও রাজ্যে শ্রমিক আইনের অবলুপ্তি ইত্যাদি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে ওই বৈঠকে। বৈঠকে অংশ নেবেন তৃণমূল দলনেত্রী তথা পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেন, ‘করোনা নিয়ে দেশের বিরোধী দলগুলি শুক্রবার একটি বৈঠক করবে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। বৈঠকে থাকবেন শরদ পাওয়ার, সোনিয়া গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরি, উদ্ধব ঠাকরে, স্ট্যালিনের মতো নেতারা। আমিও ওই বৈঠকে যোগ দেব। আমরা কোভিড–১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করব।’ পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আমরা তো সব সময়ই আলোচনা করি। বিরোধী দলগুলিরও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা উচিত। করোনা মোকাবিলায় কী ভাবে আরও ভালো কাজ করা যায়, এ ক্ষেত্রে দেশে কী কী সমস্যা এখনও রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হবে।’ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার করোনা মোকাবিলায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার যে অর্থনৈতিক প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছে, তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে ওই বৈঠকে।
জানা গিয়েছে, লকডাউনের আগে মার্চ মাসে সংসদ (লোকসভা ও রাজ্যসভা) মুলতবি করে দেওয়া হয়। তার পর থেকে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে করোনা বা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি কোনও আলোচনা করেনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। যদিও এই সরকার সরকারি ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের সরকারের সঙ্গে ভিডিও বৈঠক করেছে। কিন্তু সংসদের স্থায়ী কমিটিকে কোনও বৈঠক করার অনুমতি দেয়নি। এক বিরোধী নেতার দাবি, তাঁদের অচল করে রেখেছে সরকার। তাই বিরোধী দলগুলি এবার নিজেরাই বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই বৈঠকটি বিজেপি, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ বিরোধী হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য মার্চ মাসে লকডাউন ঘোষণার সময় বিরোধী দলগুলি জানিয়েছিল, করোনার মতো অতিমারীর মোকাবিলা কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় প্রয়াসকে তারা সমর্থন করবে। তাই শুক্রবারের বৈঠকের কথা ঘোষণা করে তারা আগের সেই ঘোষণা থেকে সরে এলো বলে মনে করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় স্তরে বিজেপির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও মুখ খুলেছেন পশ্চিমবাংলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘কোভিড–১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে ফ্রন্ট তৈরি করা হয়েছে, মনে হয়, বিরোধীদের তাতে আস্থা নেই। তাই নতুন এই করোনা ফ্রন্ট তৈরি হয়েছে।’ একই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছেন, ‘এই ধরনের ফ্রন্টের পরিণতি কী হয়, তা আমাদের অজানা নেই। লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে এসে এই নেতারাই হাত তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে শপথ নিয়েছিলেন। ফল কী হয়েছিল, তা তো সকলের ভালো করেই জানা। হয়তো বিরোধী নেতা ও নেত্রীরা সে–সব কথা ভুলে গিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগেও নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিজেপি বিরোধী দলগুলি একজোট হয়েছিল। ২১ জুলাই কলকাতার ব্রিগেডে তৃণমূলের সভায় দেশের বিরোধী নেতাদের অনেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন। অবশ্য ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলগুলি পর্যুদস্ত হয়। ফের সরকার গড়েন নরেন্দ্র মোদি। তার পর আবার বিরোধীদের একমঞ্চে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও বিরোধীদের কিছুটা উপহাস করেই দিলীপ ঘোষ এদিন আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে তাঁরা একত্রিত হয়ে লড়াই করতে চাইছেন। ভালো কথা। করুন। আরও আগে করলে ভালো করতেন। প্রশ্ন হল, একমাস আগে তাঁদের এ কথা মনে হয়নি কেন?’