উত্তর মরক্কোর স্প্যানিশ ছিটমহল সেওটার জন্য সোমবার ছিল এক ঐতিহাসিক দিন৷ সেদিন হাজার হাজার অভিবাসী ছিটমহলটির সীমান্তে এবং সমুদ্রতটে হাজির হন৷
এমনকি মঙ্গলবারও সেখানে সাজোয়াঁ যান এবং স্প্যানিশ ও মরোক্কান সেনাবাহিনীর টহল সত্ত্বেও কয়েকশত অভিবাসী সীমান্ত পেরিয়ে ছিটমহলে প্রবেশের চেষ্টা করেন৷ মরক্কোর হাসান আই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন বিশেষজ্ঞ এবং গবেষক আলী জুবাইদি এই বিষয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘‘শ’খানেকের মতো অভিবাসী নিরাপত্তা বাহিনীর নজর এড়িয়ে হেঁটে, সাঁতরে এবং কিছুক্ষেত্রে ভাসমান কিছু ধরে বা ভেলায় ভেসে স্পেনের ছিটমহলে প্রবেশে সক্ষম হয়েছে৷’’
যদিও চলতি বছরের শুরু থেকেই সেওটা এবং মেলিলাতে অভিবাসীদের আগমন বেড়েছে, তবে সোমবারের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে৷
‘মরক্কো আর স্পেনের পুলিশ হিসেবে কাজ করতে চায় না’
মাদ্রিদ এবং রেবাতের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা সীমান্তে অভিবাসীদের ভিড় বেড়ে যাওয়া একটি কারণ হতে পারে৷ গত মাসের শেষের দিকে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়, যখন স্পেন পশ্চিম সাহারা স্বাধীনতা আন্দোলন পলিসারিও ফ্রন্ট-এর নেতা ব্রাহিম ঘালিকে দেশটিতে চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছিল৷
সেই ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানাতে মরক্কো দেশটিতে নিয়োজিত স্পেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে৷ এক বিবৃতিতে আফ্রিকার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় লিখেছে, ‘‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখাটা যৌথ দায়িত্ব, যা দুই দেশের প্রতি পারস্পরিক আস্থা এবং কৌশলগত স্বার্থরক্ষার স্থায়ী প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে রক্ষা করা উচিত৷’’
সাবেক স্প্যানিশ উপনিবেশ পশ্চিম সাহারাকে কেন্দ্র করে মরক্কো এবং আলজেরিয়া সমর্থিত পলিসারিও ফ্রন্টের মধ্যে ৪৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিরোধ চলছে৷ জাতিসংঘ এই ইস্যু চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে ‘অস্বায়ত্তশাসিত ভূখণ্ড’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে রেখেছে৷
ঘালিকে স্পেনের চিকিৎসা করানোর সুযোগ দেয়ার প্রতিবাদে স্প্যানিশ ছিটমহলের সীমান্তে সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিয়েছে মরক্কো যাতে হাজার হাজার মানুষ অভিবাসনের উদ্দেশ্যে সীমান্ত পাড়ি দিতে পারে৷
‘‘অভিবাসন ইস্যুতে মরক্কো স্প্যানিশ পুলিশের ভূমিকা পালন করতে চায় না৷ রেবাত চায় মাদ্রিদের সঙ্গে সম্পর্ক উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক হোক,’’ বলেন জুবাইদি৷
কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝে অভিবাসীরা
মরক্কোর মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা এএমডিএইচ এর সহসভাপতি ওমর নাজি মনে করেন তার দেশের সঙ্গে স্পেনের কূটনৈতিক টানাপোড়নে অভিবাসীদের টানা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘স্পেন এবং মরক্কো ধারাবাহিকভাবে অভিবাসীদের শোষণ করছে৷ এক্ষেত্রে অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের মৌলিক অধিকারকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না৷’’
তবে, জুবাইদি মনে করেন, মরক্বোর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক করুণ পরিস্থিতিও অনেককে স্পেনের দিকে টেনে নিচ্ছে যা অভিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধিরও কারণ হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘কূটনৈতিক উত্তেজনা না থাকলেও এটা ঘটতে পারতো৷’’
পারিবারিক পুনর্মিলন
করোনা ভাইরাসের কারণে সীমান্ত বন্ধ থাকায় মরক্কোর অনেক পরিবারের সদস্যরা, যারা স্পেনের ছিটমহলে কাজ করেন, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন৷ ধারনা করা হচ্ছে, সোমবারের অভিবাসীদের ঢল অনেক পরিবারের সদস্যদের পুনর্মিলনের পথ করে দিয়েছে৷ তাছাড়া হেঁটে বা সাঁতরে সীমান্ত অতিক্রমে সক্ষম হওয়ায় অনেকের টাকাপয়সাও বেঁচে গেছে যা সাধারণত স্পেনে প্রবেশ করতে দালালদের দিতে হয়৷ তবে, সবার পক্ষে সেওটাতে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে কেননা রেবাত ও মাদ্রিদের মধ্যে অভিবাসী বিনিময়ের চুক্তি রয়েছে৷ স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফার্নান্দো গ্র্যান্ডে-মার্লাস্কা জানিয়েছেন, সোমবার ছিটমহলে প্রবেশ করা ছয় হাজার মানুষের মধ্য থেকে ২,৭০০ জনকে ইতোমধ্যে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
সুত্র :ইনফোমাইগ্রেন্টস