ধর্ম ডেস্ক: কোরআনের ঘোষণা, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তাহলে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর দিনযাপন কেমন হবে? একে অপরের সাংসারিক জীবন, আদর্শ পরিবার গঠন হবে কীভাবে? এসবের বিবরণও রয়েছে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পারিবারিক জীবনে। যার অনুসরণ ও অনুকরণে দাম্পত্যজীবন হয়ে ওঠবে সুখময়।
হাদিসের বর্ণনায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুখময় ভালোবাসাপূর্ণ দাম্পত্য জীবনের ঘটনা ওঠে এসেছে। যার কিছু তুলে ধরা হলো-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবিদের সঙ্গে খেলাধূলা করতেন। একবার তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়ে ইচ্ছা করে হেরে যান। কিছুদিন পর পুনরায় দৌঁড় প্রতিযোগিতায় হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হেরে যান। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! আজ আমি তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি, তুমি আমার সঙ্গে পারনি। এটা হলো প্রথম প্রতিযোগিতায় জিতে যাওয়ার বদলা।
২. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মাঝে স্ত্রীদের সঙ্গে বসে বিভিন্ন ঘটনা, কাহিনী ও আন্যান্য আলোচনা করতেন। প্রত্যেক স্ত্রীই পালাক্রমে নতুন নতুন কিসসা শুনাতেন; তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে নিজেও কিসসা শুনাতেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তিনি আমাদের মধ্যে এমনভাবে হাসতেন, কথা বলতেন ও বসে থাকতেন, আমাদের মনেই হতো না যে তিনি একজন মহান রাসুল।
৩. তিনি কখনো স্ত্রীদের ভৎসনা, তিরস্কার করতেন না এবং তাদের সঙ্গে কঠোর ভাষায় কথা বলতেন না। বরং মায়া জড়ানো, মন জুড়ানো আকর্ষণীয় কথা ও ভাব বিনিময় করতেন। তাদের কোনো কথা মনের বিপরীত হলে তাদের সে কথা থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে অন্য চিন্তা করতেন। তিনি স্ত্রীদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাদের চুমু দিতেন এবং কখনো কখনো তাদের উরুতে মাথা রেখে শুয়ে থাকতেন।
৪. রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের এতটা ভালোবাসতেন যে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পাত্রের যে জায়গায় মুখ দিয়ে পানি পান করতেন, তিনিও সে জায়গায় মুখ দিয়েই পানি পান করতেন। আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁড়ের যে জায়গা থেকে গোস্ত খাওয়া শুরু করতেন হজরত আশয়া রাদিয়াল্লাহু আনহাও হাড়ের ঐ জায়গা থেকে গোস্ত খাওয়া শুরু করতেন।
৫. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত খুশি মনে মুচকি হাসতে হাসতে ঘরে প্রবেশ করতেন এবং দরদমাখা কণ্ঠে সালাম দিতেন। বিশ্রামের সময় বিছানার ব্যাপারে দোষ ধরতেন না, বিছানা যেভাবে পেতেন তার উপরই শুয়ে পড়তেন।
৬. এমনকি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম স্বামী যে তার স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে। আমি আমার স্ত্রীদের সঙ্গে সবার চেয়ে ভাল ব্যবহার করি।
দাম্পত্য জীবনকে সুখ-শান্তি ও আনন্দময় করে তুলতে হাদিসের অনুকরণ ও অনুসরণের বিকল্প নেই। তাই আসুন! আমাদের দাম্পত্য জীবনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাম্পত্য জীবনের মতো করেই রাঙিয়ে নিই। গড়ে তুলি আদর্শ সমাজ। আল্লাহ তাআলা সবার দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করুন। আমিন।