ওয়েব ডেস্ক: অতিবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ধসের কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৪৮টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, আশ্রয়কেন্দ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের মধ্যে বিতরণের জন্য ৬ হাজার প্যাকেট খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে।
দুর্যোগের কারণে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটিসহ সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জনসাধারণের যানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দামপাড়ার চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগে চালু করা হয়েছে জরুরি কন্ট্রোল রুম। দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত এ কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা জনগণের সেবায় কাজ করবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০২৩৩৩৩৬৩০৭৩৯।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভায় চসিকের প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম কুইক রেসপন্স টিম গঠনসহ বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন।
প্রশাসকের নির্দেশনা অনুসারে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডের জন্য ৭টি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা জনগণকে দ্রুত নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া এবং তাদেরকে ত্রাণসামগ্রী, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়ে ৭টি টিম কাজ করছে।
এ ছাড়া, অ্যাম্বুলেন্স ও প্রয়োজনীয় ঔষধ মজুদসহ তিনটি জরুরি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি চসিকের ৫৪টি হেলথ কমপ্লেক্স স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের জন্য ছয় হাজার প্যাকেট খিচুড়ি, এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন, জরুরি ঔষধ, অ্যাম্বুলেন্সসহ পর্যাপ্ত যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে জরুরি কুইক রেসপন্স টিম উদ্ধার কাজসহ যাবতীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে নাগরিকদের সরে যেতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় চসিকের কর্মীরা দুর্যোগপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে মাইকিং শুরু করেছে।
গত চারদিন ধরে চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে জলাবদ্ধতা। নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাত থেকে ভারি বর্ষণে নগরীর অধিকাংশ এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, শুলকবহর, বাদুড়তলা, চকবাজার, বাকলিয়া, রাহাত্তারপুল, ডিসি রোড, আগ্রাবাদের সড়কে যানচলাচল একেবারে সীমিত, সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি। এসব এলাকার অনেক বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে গেছে।
যদিও দুপুরে থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
চট্টগ্রামের আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে শুক্রবারও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলায় বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) মধ্যরাত পর্যন্ত ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।