নিজস্ব প্রতিবেদক: দিনের বেশিরভাগ সময় নয়াপল্টন কার্যালয়েই কাটত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর। করোনাকালেও তিনি নিয়মিত কার্যালয়ে আসতেন। মানবিক সহায়তা নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। আবার ফিরে আসতেন কার্যালয়ে। দলের দাফতরিক কাজ সারতেন, দলের হয়ে প্রেস ব্রিফিং করতেন নিয়মিত।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর জামিন হওয়ার আগ পর্যন্ত একদিনের জন্যও দলীয় কার্যালয় ছাড়েননি রিজভী। নেত্রীকে জেলে রেখে নিজে বাসায় আরামে ঘুমাবেন না– এমন প্রত্যয় ছিল এ নেতার। পরে খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পেলে বাসায় ফেরেন। সেই রিজভীই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন না প্রায় দুই মাস হলো। না, মান-অভিমান থেকে নয়। গুরুতর অসুস্থতার কারণে প্রিয় পার্টি অফিসে এতদিন আসতে পারেননি রিজভী। হৃদরোগের চিকিৎসা শেষে ৫৯ দিন পর নয়াপল্টনের কার্যালয়ে ফিরেছেন বিএনপির এ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। লাঠি হাতে ধীরগতিতে সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় উঠেন রিজভী। পরে নিজের দফতরে বসে নেতাকর্মী, অফিসকর্মীদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। তারা প্রিয় নেতার স্বাস্থ্যের খবরাখবর নেন। রিজভীও নেতাকর্মী ও অফিসকর্মীদের পরিবারের লোকজনের খবরাখবর নেন।
এদিন রিজভীর হঠাৎ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগমনে কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। কাছাকাছি থাকা কয়েকজন নেতাকর্মীও ছুটে আসেন তার সঙ্গে দেখা করতে। রিজভী এ সময় অসুস্থতার দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করেন। অসুস্থ অবস্থায় তার খবরাখবর নেয়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখন অনেকটাই সুস্থবোধ করছি। রিং পরানোর পর আমাকে অনেক সতর্কতার সঙ্গে চলতে হচ্ছে। যেটি আগে কখনই আমি করিনি।
এখন থেকে নিয়মিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করে দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ নেতা বলেন, নিয়মিত কার্যালয়ে আসার চেষ্টা করব, যদি শরীর সাপোর্ট দেয়। যারা দোয়া করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রিজভী বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমি সুস্থ হয়েছি। আমার সুস্থতার জন্য দেশে-বিদেশে কর্মী-সমর্থকসহ দেশবাসী দোয়া করেছেন, মিলাদ পড়েছেন, রোজা রেখেছেন এবং প্রার্থনা করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সুস্থ রাখুন, হেফাজতে রাখুন।
এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর রিজভীর স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম ও শ্যালিকা তাহমিনা বেগমের করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এর পর থেকে রিজভী অন্য একটি বাসায় আছেন। রিজভী জানান, তার স্ত্রী ও শ্যালিকা সুস্থ আছেন, তেমন কোনো উপসর্গ নেই। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছেন তারা।
প্রসঙ্গত অসুস্থ হওয়ার আগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব নয়াপল্টনে অফিস করেন গত ১২ অক্টোবর। পর দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক দলের মানববন্ধন শেষে গাড়িতে ওঠার পর রিজভী হৃদরোগে আক্রান্ত হন। দ্রুত তাকে নেয়া হয় কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। পরে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১৫ অক্টোবর এ হাসপাতালে তার এনজিওগ্রাম করা হয়। তাতে হার্টে একটি ব্লক ধরা পড়লে ইনজেকশন দিয়ে সেটির ৪০ শতাংশ অপসারণ করা হয়। ১৩ দিন ল্যাবএইড হাসপাতালে থাকার পর ২৮ অক্টোবর ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেন।
পরে ফলোআপ করাতে গত ১৭ নভেম্বর আবার ল্যাবএইডে ভর্তি হন রিজভী। সেখানে ২১ নভেম্বর তার হৃদযন্ত্রে রিং পরানো হয়। ২৪ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফেরেন তিনি। আজ ৫৯ দিন পর কার্যালয়ে এলেন রিজভী।