নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে বিশেষ অনুমোদন পাওয়া চার প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে একনেক বৈঠক বন্ধ থাকায় জরুরি বিবেচনায় প্রকল্পগুলো অনুমোদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার একনেক বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পগুলো উপস্থাপন করা হবে।
একনেকে উঠতে যাওয়া প্রকল্প চারটি হলো- বিশ্বব্যাংকের ঋণে করোনা মোকাবিলা প্রকল্প, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে করোনা মোকাবিলা প্রকল্প, প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্প এবং মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম। আগামী ২ জুন অনুষ্ঠেয় একনেকে এই চারটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর একনেক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে ভার্চুয়াল বৈঠক আকারে। গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপাসন শেখ হাসিনা। পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে প্রথমবারের একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। আর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এর আগে ১৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে একনেকের ক্ষেত্রে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, একনেক উপস্থাপন হবে ‘কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া সহজ শর্তের ঋণ ৮৫০ কোটি টাকা, বাকি টাকা ব্যয় করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পের আওতায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করতে নির্বাচিত হাসপাতালে টেস্টিং সুবিধা বাড়ানো, করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় জরুরি প্রয়োজনে এরই মধ্যেই প্রকল্পটির বিশেষ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া ‘কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্ড অ্যান্ড প্যানডেমিক রেসপন্স’ নামে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে একনেকে। এই প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৮৫০ কোটি টাকা আসছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে, বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে। এই প্রকল্পও বিশেষ অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট দিয়ে সজ্জিত করা, কমপক্ষে ১৯টি পরীক্ষাগারের সক্ষমতা ও গুণগত মানকে কোভিড-১৯ মাইক্রোবায়োালজিক্যাল ডায়াগনস্টিক সুবিধা দিয়ে উন্নত করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতের কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ জন কর্মীকে আধুনিক দক্ষতা এবং জ্ঞানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে পিসিআর মেশিন, পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ, পিপিই ও মাস্ক কেনার কাজে এই প্রকল্পের টাকা খরচ করা হচ্ছে।
বাকি দুটি প্রকল্পের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ‘প্রাথমিক উপবৃত্তি (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পটির সংশোধনী বাস্তবায়নে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বকেয়া অর্থ পরিশোধে জরুরি বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এবারই প্রথম জুতা, জামা ও স্কুল ব্যাগ কিনতে সব শ্রেণির জন্য এককালীন ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (সপ্তম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭৪ হাজার জনবলের বেতন দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির ষষ্ঠ পর্যায়ের মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ইমাম, খাদেম ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। মানবিক দিক ও গুরুত্ব বিবেচনায় এও জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী।