দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ কক্সবাজারে নুরুল আলম (৭২) নামের এক বৃদ্ধকে বিবস্ত্র করে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। বেশ কিছুদিন আগের এ ঘটনার একটি ভিডিও গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সেখানে দেখা গেছে কয়েকজন যুবক ওই বৃদ্ধ নুরুল আলমকে মারছে কিল-ঘুষি, পরনের লুঙ্গি, গেঞ্জি টেনে ছিড়ে ফেলছে সাথে সাথে অসভ্য গালিগালজও করছে। আর কয়েকজন যুবক তা মোবাইলের ক্যামরায় ভিডিও ধারণ করছে। তবে কেউ এগিয়ে আসেনি ওই বৃদ্ধকে বাঁচাতে। এভাবেই হেনস্থা করা হয়েছে বয়োবৃদ্ধ নুরুল আলমকে।
গত মাসের ২৪ মে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ায় মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে। আর এ ঘটনায় জড়িত যুবলীগ নেতার নাম আনছুর আলম (৩৫)। সে একই ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এবং মৃত মনির উল্লাহর ছেলে।
এঘটনার পর গত ৩১ মে রাতে বৃদ্ধ নুরুল আলমের ছেলে আশরাফ হোসাইন বাদী হয়ে চকরিয়া থানা একটি এজাহার দায়ের করেন। তবে, এজাহারটি এখনো তদন্তধীন বলে জানা গেছে।
এতে আসামি করা হয়েছে- ওই এলাকার বদিউল আলম (৫৫), আনছুর আলম (৩৫), শাহ আলম (৫২), শাহ আলমের স্ত্রী আরেজ খাতুন (৪৮), বদিউল আলমের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮), আবদুল জাব্বারের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (৩২), জয়নাল আবেদিন (৩০) এবং মনজুর আলমের ছেলে মো.রুবেল (২৮)।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ২৪ মে আমার বয়োবৃদ্ধ বাবা নুরুল আলম ঈদের বাজার করে ঢেমুশিয়া স্টেশন থেকে টমটম গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে আনছুর আলমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী টমটম থেকে আমার বাবাকে নামিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে পড়নে থাকা লুঙ্গি, গেঞ্জি ছিড়ে পেলে। পাশাপাশি মারধর ও অসভ্য গালিগালাজও করে। কয়েকজন যুবক এসব ঘটনার মোবাইলের ক্যামরাতে ধারণ করে। এসময় আমার বাবা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে। পরে ঘটনাটি শোনার পর আমার ছোট ভাই সিএনজি চালক সালাহউদ্দিন স্থানীয় লোকজনসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার বাবাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করান।
মামলার বাদী আশরাফ হোসাইন এজাহারে আরো দাবি করেন, ঘটনার সময় আমার বাবার ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট ও পকেটে থাকা নগদ সাড়ে সাত হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয়।
আশরাফ হোসাইন আরও বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে আমার বাবার উপর অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে ঘটনার অন্যতম সন্ত্রাসী আনছুর আলম। সে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বলেন, তুচ্ছ একটি ঘটনার জের ধরে এমন অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বয়স্ক নুরুল আলমের সাথে। তিনি এই এলাকার বয়োবৃদ্ধ। সবাই ওনাকে খুব সম্মান করে। এলাকার কিছু চিহিৃত সন্ত্রাসী ঘটনাটি ঘটিয়েছে। বিষয়টি আমাকে জানানোর পর থানায় এজাহার দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে আনছুর আলমের মোবাইলে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছেলে আশরাফ হোসাইন একটি এজাহার দিয়েছি বলে শুনেছি। তবে এজাহারটি এখনো আমার হাতে আসেনি। এজাহারটি হাতে আসলে খুব তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো. মতিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টা আমি ফেসুবকে দেখেছি। যারা এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেছে মোটেও ভালো কাজ হয়নি। ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধেরও পরিবার-পরিজন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি। যারা এই ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন