রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাঙামাটির লংগদু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বারেক সরকারের এবার স্থানীয় এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকে পেটানোর অভিযোগ ওঠেছে। সোমবার দুপুরে লংগদু উপজেলা পরিষদ মাঠের সামনে মারধরের ঘটনায় সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বারেক সরকারের শাস্তি দাবি করেছে আওয়ামী লীগ নেতারা। হামলায় আহত উপজেলার মাইনীমুখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. বেল্লালকে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে আনা নেওয়া হয়েছে। মূলত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ খোয়ান আব্দুল বারেক সরকার। এবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ পিটিয়ে আবারো আলোচনায় এসেছেন তিনি।
হামলায় আহত মাইনীমুখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘হাজাছড়ার একজন কর্মী আমাকে জিজ্ঞাস করেন তাকে কেন কমিটিকে রাখা হয়নি। তখন আমি তাকে জানিয়েছিলাম উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে নিষেধ করেছেন। সে এই কথাটি আবার চেয়ারম্যানকে জানায়। আজ (সোমবার) সকালে চেয়ারম্যান কোন কথাবার্তা না শুনেই আমাকে হাত দিয়ে কিলঘুশি মারে, পরে তার পায়ের জুতা দিয়ে মারতে থাকে। পরে আশে-পাশের লোকজন আমাকে রক্ষা করে।’
এদিকে, মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেই উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল বারেক সরকার বলেন, ‘দলীয় কর্মীকে আমি বাদ দেওয়ার কথা বলেছি এটি মিথ্যা অভিযোগ। আমি এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে নেই, সেখানে আমি এ কথাটি বলি কিভাবে। এ বিষয়টি জিজ্ঞেস করতে গেলে বেলাল আমার সঙ্গে উচ্ছস্বরে কথা বলে। পরে আমি তাকে দুটি থাপ্পড় দিয়েছি।’ বারেক সরকারের অভিযোগ, হামলার সময় বেল্লাল হোসেনের সঙ্গে থাকা লোকজন বারেক সরকারের সঙ্গে থাকা ২ লাখ ৯৩ টাকা ৫শ’ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা মো. বেল্লালকে মারধরের ঘটনা বারেক সরকারের ‘পূর্ব পরিকল্পনা’ ছিল বলেই ইঙ্গিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু। বাবু জানান, ‘সকালেই বারেক সরকার আমাকে জিজ্ঞেস করে বেল্লাল কোথায় আছে। এরপর দুপুরে বেল্লালকে মারধর করা হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে অবস্থান নেওয়ায় সভা-সমাবেশে তার বিরুদ্ধে কথা বলাতেই বারেক সরকার ক্ষেপেছেন। এবার আমাদের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে মারধর করছেন।’ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাবু বলেন, ‘তিনি (বারেক সরকার) নিজেই বেল্লালকে মারধর করতে গেছেন। মারধর করতে গেলে কেউ কি সঙ্গে টাকা নিয়ে যাবেন? এটা তার বানোয়াট অভিযোগ।’
এদিকে, দুপুরে ইউপি আওয়ামী লীগ নেতাকে হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে আওয়ামী লীগ। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় হতে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি দলীয় কার্যালয়ে ফের এসে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সভা করেন নেতারা। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুভাস চন্দ্র দাশ, সহ-সভাপতি আব্দুল আলী ও হুসেন আলী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য আসমা আক্তারসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সভা থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা হামলাকারিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে তৎকালীন লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আব্দুল বারেক সরকারকে দলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে দলীয়ভাবে ‘ঘর ছাড়া’ উপজেলা চেয়ারম্যান বারেক সরকার উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।