শেখ সাখাওয়াত হোসেন,পাবনা (জেলা) প্রতিনিধি:
হেমন্তের ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বাংলার মাঠ। সোনালী ধানে ভরে গেছে মাঠ প্রান্তর। সারা মাঠে যেন ছড়ানো রয়েছে সোনা। জমির অধিকাংশ ধানে পাঁক ধরেছে। কৃষক মাঠে ধান কাটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আবার কোথাও কোথাও ধান কাটা শুরু হয়েছে। নিজেদের খাবারের চাহিদার পাশাপাশি গবাদি পশুর জন্য খড় সংগ্রহ করাও জরুরী হয়ে পড়েছে। খড়ের দাম বেশী থাকায় অনেকেই পুরো ধান পাকার আগেই জমির ধান কাটতে শুরু করেছে।
ধান কাটা, ধান সংগ্রহ ও খড় শুকানো নিয়ে ইতমধ্যেই কৃষক পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি বাড়ীর মহিলারাও ব্যস্ত সময় পার করছে। এখন আর আগের মত গরু-মহিষ দিয়ে ধান মাড়াই করা হয়না, আধুনিক মাড়াইযন্ত্র দিয়ে খড় থেকে ধান আলাদা করা হয়। বাড়ীর পুরুষরা মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত থাকায় ধান উড়ানো, শুকানো ও খড় শুকানোর মত কাজ বাড়ীর মহিলারা করছে।
বেড়া উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নূসরাত কবীর জানান, এ মৌসুমে বেড়া উপজেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ২শ’৫০ হেক্টর জমিতে। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে বেশী চাষ করা হয়েছে। আমন মৌসুমে বেড়া উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার ৮শ’৫০ হেক্টর বা ৫৪ হাজার ৮শ’ বিঘা জমিতে বোনা আমন এবং ৪ শ’হেক্টর বা ৩ হাজার ২শ’ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।
ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১১হাজার ৯শ’৮৯ মেট্রিক টন। যার মধ্যে বোনা আমন ১০হাজার ৫শ’৪৯ মেট্রিক টন এবং রোপা আমন ১হাজার ৪শ’৪০ মেট্রিক টন। আমন মৌসুমে ব্রী-৭৮,ব্রী-৩৯,ব্রী-৪৯,স্বর্ণা এবং বিনা-৭ও বিনা-১৭ উন্নত জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২২ মন উচ্চ ফলনশীল ব্রী-৮৭ জাতের ধানের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এলাকার কৃষক। অনুকুল আবহাওয়া, ভালো ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন। বিঘা প্রতি রোপা আমন ধানের গড় ফলন ১৫ থেকে ১৭ মন এবং বোনা আমন বিঘা প্রতি ৬ থেকে ৭ মন পাওয়া যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
বেড়া সিএন্ডবি ধানের হাটে ধান বিক্রি করতে এলে কথা হয় উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া গ্রামের রোপা আমন চাষী নজরুল ইসলাম, কৈটোলা ইউনিয়নের কৈটোলা গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, মাঠে কেবল ধান কাটা শুরু হয়েছে। সামান্য কয়েক মন ধান বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। ধানের চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামী মৌসুমে বেশী করে ধানের চাষ করবেন বলে জানান হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকরা।
উপজেলার ঢালার চর ইউনিয়ন, মাসুমদিয়া ইউনিয়ন, রুপপুর ইউনিয়ন, জাতসাকিনী ইউনিয়ন ও হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বোনা আমন ধানের চাষ বেশী হয়ে থাকে। হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চরসাঁড়াশিয়া গ্রামের আব্দুল কাদের, চরনাগদহ গ্রামের মমিন উদ্দিন, ঢালারচরের সুমন আলীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, রোগ বালাই, পোকা মাকড়ের আক্রমন না হওয়ায় আমন ধানের কাঙ্খিত ফলন হয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ইউনুস আলী দৈনিক প্রত্যয় কে জানান, বোনা আমন ধান চাষে কৃষকের তেমন বেশী কিছু খরচ না হওয়ায় কৃষক বোনা আমন ধানের চাষ করে থাকে। সার, কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় বোনা আমন ধান চাষে তেমন খরচ নাই বল্লেই চলে। ফলন ভাল হলে বিঘা প্রতি গড়ে সাড়ে ৬ থেকে ৭ মন পর্যন্ত ধান পাওয়া যায়। এ মৌসুমে বর্ষার পানি দেরীতে আসায় এবং অধিক বন্যা না হওয়ায় বোনা আমন ও রোপা আমন ধানের কাঙ্খিত ফলন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।