নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না, আবার থাকলেও রোগী দেখেন না। বেশির ভাগ রোগী দেখেন ইন্টার্নি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন তারা। নানা ছুতোয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। প্রায়ই চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন রোগীদের। মিরপুরে অবস্থিত এই সরকারি হাসপাতালটির বিরুদ্ধে এরকম হাজারো অভিযোগ রয়েছে। ফলে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানে আসা রোগীরা।
‘ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল কালেকশন ও রিপোর্ট দেওয়া সকাল ৯টার সময় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৯টার সময় দায়িত্বরত প্যাথলজিস্ট কাউকে কাউন্টারে উপস্থিত পাওয়া যায় না। তারা ডিউটিতে আসেন অনেক দেরিতে। রিপোর্ট নেওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। কাউন্টারে একজন আরেকজনকে দেখিয়ে একজন বলে উনি রিপোর্ট দিবে, আরেকজন বলে তিনি রিপোর্ট দিবে। এভাবে অপেক্ষা করিয়ে হয়রানি করেন। এছাড়া নির্দিষ্ট তারিখ দিয়েও রিপোর্ট হয়নি বলে রোগীদের ফিরিয়ে দিয়ে ভোগান্তিতে ফেলেন। অন্যদিকে দুপুর ১২টার সময় স্যাম্পল কালেকশন ও রিপোর্ট দেওয়া বন্ধ করে দেয়।’ কথাগুলো বলছিলেন সাভার থেকে আসা দেলোয়ার হোসেন।
সোমবার (২৭ মার্চ) ঢাকা ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে রোগীদের ভোগান্তি দেখা যায়। তারা এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে যাচ্ছেন, কিন্তু কোথাও সঠিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বদলে চিকিৎসা দিচ্ছেন শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা। ৫ম তলার ৫০১ নম্বর কক্ষে দেখা যায়, বাইরে রোগীদের দীর্ঘ সিরিয়াল অথচ ভেতরে দুজন ডাক্টার গল্প করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিশুর মা বলেন, আমার ছেলেটা ব্যথায় কাতরাচ্ছে। আর দেখেন, ওনারা গল্প করছেন।
চতুর্থ তলায় মাইনর ও’টিতে বাইরে লেখা রয়েছে, ‘সকল প্রকার ঔষধ কোম্পানির মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের প্রবেশ নিষেধ।’ অথচ সেখানে গিয়ে দেখা যায় কাউন্টারে বসা ইন্টার্নি চিকিৎসক বাইরে রোগীদের সিরিয়ালে রেখে ভেতরে ঔষধ কোম্পানির একজন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের সাথে খোশ গল্প করছেন। এমন একটি ভিডিও দৈনিক প্রত্যয়ের দফতরে এসেছে।
রংপুরের মহসিন আহমেদ মাইনর ও’টিতে তার বোনের দাতের একটি সার্জারির জন্য এসেছেন। সার্জারি শুরু হওয়ার পরে ও’টির দায়িত্বরত একজন তাকে ডেকে গজ, ব্যান্ডেজ, হ্যান্ড গ্লাভস, ওষুধ ও ব্লেড এসব একটি কাগজে লিখে দিয়ে বললেন বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে এনে দিতে। সব কিছু আবার ডবল ডবল। মহসিন বলেন, ‘সার্জারির জন্য কোন টাকা খরচ না হলেও ঔষধ কিনিয়ে আনানোটা তাদের ধান্দা! সরাসরি রোগীর কাছ থেকে টাকা না নিলেও অপ্রয়োজনীয় ঔষধ রোগীর কাছ থেকে নিয়ে সেটা পরে বিক্রি করে টাকা নেয়।’