শেখ সাখাওয়াত হোসেন,পাবনা (জেলা) প্রতিনিধি:
কোভিড-১৯ করোনা মহামারির কারণে মার্কেটগুলোতে দুই বছর ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা ছিল হতাশাজনক। তবে করোনার প্রকোপ কমায় গত বছর থেকে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবার আরও বেশি ব্যবসার প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গত বছরগুলোর তুলনায় জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় ঈদের কেনাকাটা নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করছেন অনেক ক্রেতা।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষ্যে এখনও বেচাকেনা জমে ওঠেনি। তবে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি একটু একটু করে বাড়ছে। তাই নতুন পোশাকের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ১৫ থেকে ২০ রোজার পরই ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়বে। সেজন্য প্রতিদিনই নতুন নতুন পোশাক দোকানে সাজানো হচ্ছে।
উপজেলার ভাঙ্গুড়া বাজারের রহিমা জাফর শপিং কমপ্লেক্স, নিউ সুপার মার্কেট, হাইস্কুল রোড, রাসেল প্লাজা, রফিক উদ্দিন সুপার মার্কেট, শরৎনগর বাজারের মন্ডল প্লাজা, সাহেব সুপার মার্কেট, খন্দকার প্লাজাসহ ভাসমান মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষ্যে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোর তুলনায় ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার মার্কেটগুলোতে লোকজনের কিছুটা সমাগম হচ্ছে। তবে বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি।
সরেজমিন শনিবার (১ এপ্রিল) উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে সব বয়সী ক্রেতাদের জন্য বাহারি পোশাক সাজানো হয়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে প্রতিদিনই পুরুষদের জন্য বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি বাচ্চাদের ও নারীদের আইটেমের বিভিন্ন পোশাকও নজড় কাড়ছে। ক্রেতা টানতে কোনো ধরনের পোশাকেরই কমতি রাখছে না দোকানীরা।
প্রতিটি দোকানেই নতুন নতুন পোশাক ওঠানো হয়েছে। মার্কেটের দোকানিরা জানান, প্রত্যেক দোকানে পাঞ্জাবি, পায়জামা, টি-শার্ট, প্যান্ট, থ্রি পিচ, শাড়ি, লেহেঙ্গা, বোরকার নতুন নতুন কালেকশন জড়ো করা হচ্ছে। এখনও মার্কেটে বেচাকেনা সেভাবে শুরু না হলেও ক্রেতারা আসছেন এবং দেখছেন।
উপজেলার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের খোলা মার্কেটের ব্যবসা একটু একটু করে জমে উঠেছে। নারী-পুরুষসহ ছোটদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। ১৫ রোজার পর থেকে ক্রেতার ভিড় আরো বাড়বে। ছোটদের ও বড়দের পাঞ্জাবি, নারীদের থ্রি পিচ এবং শাড়ি বিক্রি হচ্ছে।’
উপজেলার ভাঙ্গুড়া বাজারের রহিমা জাফর শপিং কমপ্লেক্সে ঈদ মার্কেট করতে আসা সিরাজুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘ঈদে মার্কেটে চাপ বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এজন্য পরিবারের সদস্যদের জন্য আগেভাগে কেনাকাটা করে ফেলছি। গতবার ঢাকা থেকে কেনাকাটা করলেও এবার আর শপিং সেন্টার থেকে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, গত বছরের তুলনায় পরিবারের দৈনন্দিন খরচ বেড়েছে। এজন্য এখান থেকে কেনাকাটা করছি।
উপজেলার শরৎনগর বাজারের মন্ডল প্লাজার সিটি বস্ত্রালয়ের বিক্রেতা মিঠুন আহমেদ দৈনিক প্রত্যয় কে বলেন, ‘আমাদের এই মার্কেটে এখনও ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা জমে ওঠেনি। সাধারণ সময়ের মতোই বেচাকেনা হচ্ছে। আমাদের এই মার্কেটে সব সময়ই ১৫ থেকে ২০ রমজানের পর বেচাকেনা জমে ওঠে। তবে এখন যা বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বাচ্চাদের পোশাক। বয়স্কদের পোশাক রমজানের শেষের দিকে বিক্রি হয়। এর আগে করোনার কারণে গত কয়েক বছর ব্যবসা ভালো হয়নি। তবে গত বছর ব্যবসা ভালো হয়েছিল। সেজন্য সব শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য পোশাক তুলেছি। প্রত্যেক দিনই নতুন নতুন পোশাক দোকানে সাজানো হচ্ছে।’ তার দোকানেও সব বয়সী ক্রেতাদের জন্য বাহারি পোশাক সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়ন থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা নুরুজ্জামান সবুজ চাকরি করেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিবারই পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ঈদেও কেনাকাটা করতে এসেছি। তবে আজ আপাতত আমার বাচ্চার জন্য কেনাকাটা করলাম। আমাদের জন্য কেনাকাটা কয়েকদিন পরে করবো। এবার লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো গতবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম কিছুটা বেশি।’
উপজেলার ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘আমাদের সবসময়ই মোটামুটি ক্রেতা সমাগম থাকে। তবে আসছে ঈদকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন পোশাক আনা হচ্ছে। প্রতিবারই রোজার ঈদে দোকানগুলোতে কাস্টমারে ভরপুর থাকে। এবারও আশা করছি ভালো ক্রেতা পাওয়া যাবে। তবে রোজার মাঝামাঝিতে আমাদের বেচাকেনা বাড়তে থাকে। যা চলে একদম চাঁদরাত পর্যন্ত।