নিজস্ব প্রতিনিধি: বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেতে ও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করাতে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান রোগীরা। বিনামূল্যে রক্তের সব ধরনের পরীক্ষা করানোর কথা থাকলেও অনেক সময়ে বেসরকারি ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের লোকদের মানসিক চাপে পড়ে আর্থিক দিক দিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় রোগীদের। হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে শয্যা থেকে রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছে দালাল সিন্ডিকেট । এছাড়া সাড়ে ১২ ঘটিকার পর প্যাথলজি বিভাগে রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ না করায় হতাশ রোগী ও স্বজনরা। যদিও হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে রোগীর থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার কাজটি আাইনগত নয়, অন্যদিকে কর্মরত থাকা অবস্থায় যেকোনো সময় রোগীর রক্ত সংগ্রহ করতে হবে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা: নিহার রঞ্জন নন্দী।
দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠেছে রাঙামাটি শহরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠিান ‘হিল সাইড ডায়াগনিস্টিক এন্ড কন্সালটেশন সেন্টার’ বিরুদ্ধে। হিল সাইডের মার্কেটিং অফিসার মো.রিমনসহ বেশ কয়েকজনে কাজ করেন এ সিন্ডিকেটে। হাসপাতালের ভেতরের শয্যায় থাকা রোগীর কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করানো হয় হিল সাইডে। ডাক্তার হাসপাতালের তৃতীয় তলায় রোগী দেখার পরে কি কি রক্তের পরীক্ষা দিয়েছেন তা সাথে সাথে জেনে যায় নিচতলার প্যাথলজি বিভাগে। রোগীর স্বজনরা রক্তের নমুনা পরীক্ষা করাতে প্যাথলজি বিভাগে গিলে বারটার পরে রক্তের নমুনা করা হয় না বলে জানিয়ে দেয়। দূর থেকে এসে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ডাক্তার দেখানোর পরে সাড়ে বারটা বাজার পর রক্তের পরীক্ষা করাতে গেলে নমুনা সংগ্রহ করে না প্যাথলজি বিভাগ। সেসব বিষয়ে অভিযোগ করেন রোগীর ও স্বজনদের। ২৮ আগষ্ট সাড়ে ১২ ঘটিকার পরে চাই প্রæ মারমা বøাড পরীক্ষা করতে গেলে প্রতিবেদকের সামনে ৫ নং কক্ষের ষ্টাফ করিম আজকে হবে না বলে তাড়িয়ে দেয়। এবং প্রাইভেট ক্লিনিকে করতে দেখিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আর এমও) ডা.শওকত আকবর বলেন, জেনারেল হাসপাতালের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ৫ টার আগে রির্পোট দিতে হবে তাই নমুনা সংগ্রহে ৯ ঘটিকা হতে সাড়ে ১২ ঘকিা করা হয়েছে।
সরেজমিনে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া গেছে অভিযোগের সত্যতা। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মেডিসিন বিভাগে ভর্তি থাকা এক রোগীর কাছ থেকে রক্তের নমুনা নিতে এসেছেন ‘হিল সাইড ডায়াগনিস্টিক এন্ড কন্সালটেশন সেন্টারে’র মার্কেটিং অফিসার মো.রিমন। যদিও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা বিষয়ে মো.রিমনকে ডেকে নিয়ে আসেন নি রোগীর স্বজনরা। পরিচয় জানতে চাইলে অবলীলায় বললেন তিনি হিল সাইড ডায়াগনিস্টিক এন্ড কন্সালটেশন সেন্টারে মার্কেটিং অফিসার। তিনি রোগী থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে এসেছেন। কথা বলার এক পর্যায়ে এমনি তার পকেট থেকে হিল সাইড ডায়াগনিস্টিক এন্ড কন্সালটেশন সেন্টার লোগোযুক্ত একটি ভিজিটিং কার্ডও দিয়ে যান।
রক্তের নমুনা সংগ্রহের পরের দিনে হাসপাতালের নিচ তলার প্যাথলজি বিভাগে গেলে সেখানেও দেখা যায় মো. রিমনকে। রক্তের নমুনা পরীক্ষা করাতে আসা রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা হচ্ছে মো.রিমনের। রিমনসহ তার সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে হিল সাইডে রক্তের পরীক্ষা করান রোগীর স্বজনরা। প্রশ্ন হচ্ছে মো. রিমন হাসপাতালের কোনো স্টাফ কিনা..? ‘হিল সাইড ডায়াগনিস্টিক এন্ড কন্সালটেশন সেন্টারে’র মার্কেটিং অফিসার কেনই বা জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে কাজ করবেন..! এ বিষয়ে কথা হয় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শওকত আকবর খান এর সাথে। তিনি জানান, মো. রিমন নামে হাসপাতালের কোনো কর্মী নেই।
অসুস্থ অবস্থায় জেনারেল হাসপাতালে মাকে ভর্তি করান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভূক্তভোগী। তিনি অভিযোগ করে বলেন,‘ হাসাপাতালে ভর্তি করানোর পরে চিকিৎসক বেশ কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেন। বলা হয় হাসপাতালের নিচ তলার প্যাথলজি বিভাগে যোগাযোগ করতে। সেখানে গিয়ে বেলা ১টার পরে কোনো রক্তের পরীক্ষা করানো হয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে এক পর্যায়ে একজন টেকনিশিয়ান সরাসরি ওয়ার্ডে ঢুকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে চলে আসেন। তিনি নাকি হিল সাইড থেকে রক্তের নমুন সংগ্রহ করতে এসেছেন।’ তার খপ্পরে পড়ে হিল সাইডে রক্তের পরীক্ষাগুলো করান।
নানিয়ারচর উপজেলা থেকে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে এসেছেন রোগীর স্বজন মো.আল আমিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার রক্তের পরীক্ষা দিলে প্যাথলজি বিভাগে গেলে বারটার পরে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয় না বলে জানিয়ে দেন।’ আল আমিন অভিযোগ করে বলেন,‘বারটার পরে রক্ত না নিয়ে কালকে রক্ত নেয়া হবে বলে তারা চলে যাচ্ছে। অফিস সময় চারটা । সময় থাকার পরও তারা বারটার পরে রক্ত সংগ্রহ করে না।’ অন্যদিকে প্যাথলজি বিভাগে কর্মরত থাকলে যেকোন সময়ে রোগীর কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে হবে বলে জানান, রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা: নিহার রঞ্জন নন্দী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,জেনারেল হাসপাতালের কাছাকাছি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘হিল সাইড ডায়াগনিস্টিক এন্ড কন্সালটেশন সেন্টারে’র যে কয়েকজন অংশীদার রয়েছেন তাদের মধ্যে মনি নয়ন চাকমা তাদের মধ্যে একজন। তিনি জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
‘হিল সাইড ডায়াগনিস্টিক এন্ড কন্সালটেশন সেন্টারে’র মার্কেটিং অফিসার রিমনের সত্যতা স্বীকার করে হিল সাইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: রোমেল খীসা বলেন, ‘রিমনকে কিংবা আামদের স্টাফদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রোগীর পক্ষ থেকে যদি কল করে নিয়ে যায় তবেই তখন হাসপাতালে গিয়ে রক্ত সংগ্রহ করতে। এমনকি হাসপাতালের আশেপাশে ঘুরাঘুরি না করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। শুধু হিল সাইডের লোক নয়, অন্য ল্যাবের স্টাফও হাসপাতালে যায়। কথা হচ্ছে, কেউ কেউ সরাসরি খাচ্ছে আর কেউ কেউ চামচ দিয়ে খাচ্ছে। আসল কথা হচ্ছে, মনি নয়ন হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে কাজ করাতে হিল সাইডকে বেশি সন্দেহ করে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা: নিহার রঞ্জন নন্দী বলেন,‘এর আগেও বেশ কয়েকবার এবিসি ও হিল সাইড এ দুই ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ শুনেছি। তখন আমি সিভিল সার্জন ছিলাম না। সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদানের পরে হিল সাইডের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ শুনেছি। তবে এবার এবিসি ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না আসলেও হাসপাতালের ভেতর থেকে হিল সাইডের রিমন নামে একজন রক্ত সংগ্রহ করতো বলে অভিযোগ এসেছে। প্যাথলজির মনি নয়ন চাকমাকে বলে দেওয়া হয়েছে হিল সাইডের লোক যাহাতে প্যাথলজি বিভাগে না আসে এবং হাসপাতাল থেকে রক্ত সংগ্রহ না করে। পরে অভিযোগ পেলে হিল সাইডের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’