বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:বাংলা এখন হিংসার আগুনে জ্বলছে। আর এর পেছনে রয়েছে একমাত্র তৃণমূলই। বাংলার শাসক দলের বিরুদ্ধে এ ভাবেই তোপ দাগলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলের নিহত কর্মী পবন জানাকে শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার তিনি গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে। মেদিনীপুর থেকে পবন সাহার মৃতদেহ তাঁর গ্রাম দাঁতনের কুসমিতে নিয়ে যাওয়ার সময় পুরো যাত্রাপথে উপস্থিত ছিলেন দিলীপবাবু। এ ছাড়াও ছিলেন দলের জেলার নেতা জ্যোতির্ময় মাহাতো–সহ অন্য নেতারাও।
দাঁতনে পৌঁছে দিলীপ ঘোষ রীতিমতো তোপ দাগেন শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দিতে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে যাচ্ছেন আমাদের কর্মীরা। পবনও সে–ভাবেই চিঠি নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাঁর ওপর তলোয়ার নিয়ে বাইরে থেকে কিছু দুষ্কৃতীকে নিয়ে এসে আক্রমণ করে তৃণমূল। এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক হিংসা।’ তিনি বলেন, ‘আমার জ্ঞাতসারেই এই রাজ্যে বিজেপির ১০৩ জন কর্মী খুন হয়েছেন। যতদিন এই রাজ্যের ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন এই রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ হবে না।’
উল্লেখ্য, প্রথম দিকে পবন সাহা খুনের ঘটনাকে রাজনৈতিক হিংসা বলে স্বীকার করে নিয়েছিল তৃণমূলও। কিন্তু পরে নিজেদের অবস্থান বদল করে ঘটনাকে গ্রাম্য বিবাদ বলে উল্লেখ করে। সূত্রের খবর, বুধবার সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের আক্রমণে মারাত্মক জখম হন পবন। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। বৃহস্পতিবার পবনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকেই দাঁতন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শনিবার পবন জানার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গ্রামে। জেলার নেতাদের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত ছিলেন দিলীপ ঘোষও। কিন্তু পবনের শেষকৃত্য হওয়ার পরই গোলমাল শুরু হয় দাঁতনে। বেশ কিছু পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং কিছু গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
যদিও তৃণমূলের সেই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলের ভেতরে নিজেদের মধ্যে অনেক বিবাদ আছে। তা নিয়ে হামেশাই খুনোখুনি হয়। কিন্তু পবন সাহার খুন পরিষ্কার রাজনৈতিক হত্যা। তিনি রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক হিংসাকে গ্রাম্য বিবাদ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে।’ পবন সাহা খুনে বিজেপির তরফে শুক্রবারও তোপ দাগা হয়েছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। এমনকী, দিলীপ ঘোষও সেদিন বলেন, ‘রাজ্যে এবার বদলের সঙ্গে সঙ্গে হবে বদলার কাজও।’ দিলীপবাবুর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বলেন, ‘বদলার রাজনীতি করে বিজেপিই। এই সংস্কৃতি ওদের। রাজ্যের মানুষ এটা পছন্দ করেন না। তৃণমূলের সংস্কৃতি বদলার নয়। তাই বিজেপির বাংলা দখলের স্বপ্ন কোনও দিনই সফল হবে না।’
শনিবারও দাঁতনে দিলীপ ঘোষ ছিলেন তীব্র আক্রমণাত্মক। চাঁছাছোলা ভাষায় বলেন, ‘এখন করোনা ভাইরাসের আক্রমণে ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে রয়েছে সারা পৃথিবী। আমাদের দেশেও তাই লকডাউন জারি হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে আমাদের রাজ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। মানুষ এখন ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। এতটাই ভয়ের মধ্যে সকলে রয়েছেন যে, চুরি–ডাকাতির মতো দুষ্কর্মও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ হয়নি। বিজেপি কর্মীদের টার্গেট করে হয় খুন করা হচ্ছে, না হলে মিথ্যে অভিযোগে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক সময় ভয় দেখিয়ে তৃণমূল করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা সবই দেখছি। কিন্তু বেশিদিন এই কাজ করতে পারবে না তারা। এর যোগ্য জবাবই তারা পাবে।’