স্পোর্টস ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকেই আলোচনায় তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। এশিয়া কাপের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন যুব বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটার। স্বাভাবিকভাবেই তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছিলেন ২০ বছর বয়সী এই পেসার।
তবে গত কয়েক দিনে পুরনো কিছু ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছেন তরুণ এই ক্রিকেটার। নারী বিদ্বেষী মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এর মধ্যেই তানজিম সাকিবকে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলছেন কেউ কেউ। বিসিবির তরফেও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে, তার পক্ষ নেওয়া অনুরাগী অনেকে মনে করছেন উদীয়মান এই ক্রিকেটারকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তানজিমকে নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন হুয়ামূন কবির নীরব ওরফে আরজে নিরব। তিনি জানিয়েছেন, তানজিমকে ষড়যন্ত্র করে দল থেকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সোমবার সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করেন আরজে নিরব। সেখানে তানজিম সাকিবের কিছু পোস্ট পড়ে শোনান তিনি এবং তানজিম সাকিবের মতামতকে একান্তই ব্যক্তিগত হিসেবে মনে করেন নিরব। ভিডিওর ক্যাপশনে নিরব লিখেছেন, ‘সাকিব (তানজিম) কে আসলে? যার একটা কথায় দেশে হইচই পড়ে গেল? কবে উনি এতো বড় দায়িত্বশীল পদে যোগ দিলেন! জানলাম না, নাকি কাহিনী অন্য কিছু?’
নারীর চাকরি করা নিয়ে তানজিম সাকিব যে পোস্ট করেছিলেন, সেটির সঙ্গে নিজের একাত্মতা প্রকাশ করে নিরব বলেন, ‘সমস্যাটা কোথায় বলুন তো? দুটো প্রেক্ষাপট চিন্তা করেন। প্রথমটা, উনি কারও নামে গিবত করেননি, কারও নামে বদনাম করেননি। দ্বিতীয়টি, উনি নিজের ধর্ম প্রচার করার চেষ্টা করেছেন, যেটি বিশ্বাস করেন সেটি বলার চেষ্টা করেছেন। অপরাধটা কোথায়? সেটি নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন?’
কথা প্রসঙ্গ নিরব বলেন, এর আগে দেখলাম, কোনো একজন খেলোয়াড় সে তার বাবাকে দিয়ে পূজা করছে এবং তারপরে সে ৯ উইকেট পেয়েছে। তারপরে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে। এখানে তো অসুবিধার কিছু দেখছি না। কোনো অসুবিধা হয়নি তো দেশে। অন্য ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করছে, তাহলে (সাকিবের ক্ষেত্রে) অসুবিধা কোথায়? সে (তানজিম সাকিব) তার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছে, এই তো কথা! আমার মনে হয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই বিষয়ে একমত যে, স্ত্রীরা কাজ (চাকরি) করলে এই এই অসুবিধা হয়। সেই অধিকাংশ মানুষদের একজন তানজিম।
নারীদের চাকরি করার বিষয়ে তানজিম সাকিবের পোস্ট নিয়ে আরজে নিরব বলেন, আপনি যদি এখন পোলে ছেড়ে দেন (তানজিম সাকিবের ফেসবুক পোস্ট) তাহলে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ তার সঙ্গে একমত পোষণ করবে। কিন্তু তারপরে চাকরি এখন করতে অনেকে বাধ্য। কারণ একার চাকরির টাকায় এখন সংসার চলে না। প্রায় ১০-১২ বছর হয়ে গেছে যে, এখন আর একার টাকায় সংসার চলে না। তাতে অনেকে চাকরি করতে বাধ্য হয়। এখন যুক্তি হলো যে, আমার মা চাকরি করে, আমার ওয়াইফ কাজ করে। আমাদের পরিবারে অনেক মেয়ে কাজ করে। আমি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি না, আমি সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। আমি মনে করি, এখন নারীদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অনেক জরুরি।
তানজিম সাকিবের বিষয়ে আরজে ও উপস্থাপক নিরব বলেন, ‘উনি জাতীয় দলের খেলোয়াড়। এখন জাতীয় দলের খেলোয়াড় হলে যদি তার ব্যক্তিগত মতামত দেয়ার অধিকার না থাকে কোড অব কনডাক্ট অনুযায়ী, তাহলে সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তাহলে তাদের ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থাকার কথা নয়, কারণ সেটি ব্যক্তিগত। আমার মনে হয়, এখানে অনেক বড় একটা চক্রান্ত আছে ভাই।’
চক্রান্তের কথা উল্ল্যেখ করে উপস্থাপক নিরব তার ভিডিওতে বলেন, মোস্তাফিজ যখন হেভি হিট, সেই সময়ে মোস্তাফিজকে এমন একটি কোচিংয়ে পাঠানো হলো। এরপরে মোস্তাফিজ এসে আর মোস্তাফিজ নাই। মোস্তাফিজের বলে কোনো ধার নেই, আউট হয় না। কিচ্ছু নেই, বলে ছয় মারে। মোস্তাফিজকে শেষ করে দেয়া হলো। আশরাফুল যখন তুঙ্গে খেলায়, সে সময় তাকে এমন একটা ফাঁদে ফেলানো হলো যে, ফাঁদ থেকে তার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে গেল। বাংলাদেশের ক্রিকেটটা ধ্বংস হয়ে গেল। এই ছেলেগুলো যখনই উঠে আসতে চায় তখন আমাদের বড় ভাইয়েরা, বড় দাদারা এমন এমন কিছু করে যাতে পরবর্তীতে সে আর কিছু না করতে পারে। আমি নিশ্চিত তানজিমকে ষড়যন্ত্র করে দল থেকে বাদ দেয়া হবে। খুব নিশ্চিত। তাতে অনেকের লাভ। ফলে প্রতিবাদ করে লাভ নেই। ধর্মীয় অনুভূতি প্রত্যেকের আলাদা আলাদা, সেটিই থাকা উচিত। এখন কে সামাজিম মাধ্যমে কী লিখল, তা দিয়ে একটি জাতির নীতি-নির্ধারণ নিশ্চয়ই হবে না। আজকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যদি একটি ইসলামি দলও যদি বসে তাতেও নীতি-নির্ধারণ হুট করে বদল করা সম্ভব না বা হবে না, হওয়া উচিতও না।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তানজিম সাকিব তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। এই পোস্ট নিয়েই মূলত বিতর্কের সূত্রপাত। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়। স্ত্রীকে যেই স্বামী বলে- আমার স্ত্রীর চাকরি করার দরকার নেই। আমি যা পাই তোমাকে খাওয়াব, সে তাকে রাজরানি হয়ে আছে। এখন সে রাজরানি না হয়ে কর্মচারী হতে চায়। আসলে স্ত্রী স্বামীর মর্যাদা বোঝেনি, স্ত্রী নিজের মর্যাদাও বোঝেনি। ঘর একটি জগৎ।
এছাড়াও সেখানে আরও কিছু লেখা ছিল। সেগুলো নিয়ে নেটিজেনরা এখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত। অনেকে তরুণ এই ক্রিকেটারকে দল থেকে বাদ দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।