স্পোর্টস ডেস্ক: আফগানদের বিপক্ষে উড়ন্ত সূচনার পর মনে হচ্ছিল, আকাশে উড়বে বাংলাদেশ। কিন্তু তা না। বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পরের দুই খেলায় ব্যাট ও বলে ভীষণ অনুজ্জ্বল, শ্রীহীন টাইগাররা।
দু’দুটি বড় পরাজয় সঙ্গী। তাই ভক্ত ও সমর্থকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি সাকিবের দল, ফর্মের চূড়ায় থাকা ভারতের সামনে সাকিব বাহিনীর না জানি কী করুণ দশা হয়!
তারওপর শোনা যাচ্ছে, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ইনজুরির কারণে নাও খেলতে পারেন। সাকিববিহীন বাংলাদেশের কী হবে? শঙ্কিত ভক্ত ও সমর্থকমহল।
এদিকে টিম বাংলাদেশের যত চিন্তা দুই ভারতীয় তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা। দুজনারই বাংলাদেশের সঙ্গে ট্র্যাক রেকর্ড দারুণ।
এর মধ্যে রোহিত শর্মার পয়োমন্ত প্রতিপক্ষই যেন বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ১৬ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে তার সেঞ্চুরি তিনটি এবং সবকটাই আইসিসি ইভেন্টে। দুটি বিশ্বকাপে, অন্যটি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে রোহিতের প্রথম সেঞ্চুরি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে (১৯ মার্চ মেলবোর্নে ১২৬ বলে ১৩৭)। এরপরের সেঞ্চুরিটি দুই বছর পর ইংল্যান্ডের মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। দিনটি ছিল ২০১৫ সালের ১৫ জুন।
বার্মিংহামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২৯ বলে ১২৩ রানের হার না মানা শতক উপহার দেন রোহিত। আর তাতেই বাংলাদেশের করা ২৬৪ রান টপকে অনায়াসে ৯ উইকেটের জয় নিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় বিরাট কোহলির ভারত।
আর ভারতের বর্তমান অধিনায়কের বাংলাদেশের সঙ্গে সবশেষ সেঞ্চুরিটিও বিশ্বকাপেই। ২০১৯ সালের ২ জুলাই বার্মিংহামে টাইগারদের বিপক্ষে ৯২ বলে ১০৪ রানের দারুণ ইনিংস উপহার দেন রোহিত। ওই ইনিংসে ভর করে ৫০ ওভারে ৩১৪ রানের বড়সড় পুঁজি পায় ভারত। পরে প্রাণপন লড়েও বাংলাদেশ হার মানে ২৮ রানে।
চার বছর আগের সেই ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯ রানে জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসেন রোহিত শর্মা। প্রথম ওভারেই কাটার মাস্টারকে পুল করে বড় ছক্কা হাঁকান রোহিত। ঠিক দুই ওভার পর পুল খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজের বলে তামিম ইকবাল ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে ১৫ গজ বাঁ দিকে দৌড়ে সে ক্যাচ হাতে নিয়েও ফেলে দেন।
মাত্র ৯ রানে জীবন পেয়ে আর পিছন ফিরে তাকাননি রোহিত। শতরান করে বাংলাদেশের সর্বনাশ ডেকে আনেন। অনেকেই মনে করেন আগের বিশ্বকাপে তামিম যদি রোহিত শর্মার ক্যাচটি ধরতে পারতেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারতো। এক রোহিতই যে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে যথেষ্ট!
১৯ অক্টোবর পুনেতে ভারতের বিপক্ষে খেলার আগে তাই বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থক সবার চোখ রোহিতের দিকে। সবার কথা, রোহিত শর্মা যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারেন। তাকে চটজলদি সাজঘরে ফেরাতে হবে এবং কোনোভাবেই তার ক্যাচ হাতছাড়া করা যাবে না।
এবার এমনিতেই রোহিত আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। মাঝে প্রায় দেড় বছর খারাপ সময় কাটালেও অতিসম্প্রতি আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন এ মারকুটে ওপেনার।
তবে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় রোহিতের ব্যাট কথা বলেনি। ইন্ডিয়ান ক্যাপ্টেন প্রথম খেলায় ফিরে গেছেন শূন্য রানে। কিন্তু পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঝড় তুলে শতক হাঁকিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি আদল ও মেজাজে ১৫৫.৯৫ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ৮৪ বলে ৫ বিশাল ছক্কা ও ১৬ বাউন্ডারিতে ১৩১ রানের টাইফুন ইনিংস উপহার দেন ভারতীয় ওপেনার।
পরের খেলায় আহমেদাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষেও ঝড় তুলেছেন রোহিত। তার ব্যাটিং তাণ্ডবে শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, হাসান আলী ও শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজরা খড়কুটোর মতো উড়ে গেছেন।
৬৩ বলে সমান ৬টি করে ছক্কা ও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৮৬ রানের এক মাঠমাতানো ইনিংস খেলে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেন রোহিত।
বাংলাদেশের বিপক্ষেও তিনি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। সেটা মাথায় রেখেই এগোতে হবে টাইগারদের, করতে হবে গেমপ্ল্যান। রোহিতকে কোনোমতেই চড়ে বসতে দেওয়া যাবে না। আর সুযোগ আসলে লুফে নিতে হবে এক ঝটকায়। সেটা করতে পারলে তবেই বিশ্বমঞ্চে ভারতবধের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।