স্পোর্টস ডেস্ক: তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজার মত বিশ্বকাপে ভারত বধের স্বার্থক, সফল রূপকার ও নায়ক নন। তারপরও বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের আগে যে সেই সাকিব আল হাসানের কথাই সবার মুখে মুখে।
ইতিহাস জানাচ্ছে, বাংলাদেশ যখন বিশ্বকাপে প্রথমবার ভারতকে হারায় সেই ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় জয়ের স্থপতি ছিলেন সাবেক টাইগার ক্যাপ্টেন। নড়াইল এক্সপ্রেসের বারুদে বোলিংয়ে ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ পোর্ট অফ স্পেনে বাংলাদেশ পায় ৫ উইকেটের দারুণ জয়। ম্যাচসেরা মাশরাফি বিন মর্তুজা ৩৭ রানে ৪ উইকেট শিকার করে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামান।
প্রথম স্পেলে বীরেন্দর শেবাগ (২) আর রবিন উথাপ্পাকে (৯) সাজঘরে ফিরিয়ে ভারতকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন মাশরাফি। পরে দুই বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক (৩/৩৫) আর আব্দুর রাজ্জাকের (৩/৩৮) স্পিন ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে ভারত।
সৌরভ গাঙ্গুলি, শেবাগ, রবিন উথাপ্পা, শচিন টেন্ডুকার, রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি ও জহির খানের গড়া ভারতের সবসময়ের অন্যতম সেরা দল মাত্র ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যায়।
সেই উদ্ভাসিত জয়ে ব্যাট হাতে হাফসেঞ্চুরি হাঁকালেও বল হাতে উইকেটই পাননি আজকের বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব (১০-০-৪৪-০)। উইকেট না পাওয়া দলে আরও একজন ছিলেন। তিনি সৈয়দ রাসেল।
মাপা জেন্টল মিডিয়াম পেস দিয়ে দারুণ সমীহ জাগোনো বোলিং করেন বাঁহাতি সৈয়দ রাসেল (১০-২-৩১-০)। এরপর ওপেনার তামিম ইকবাল (৫৩ বলে ৫১), টপ অর্ডারে নামা মুশফিকুর রহিম (১০৭ বলে ৫৬), আর মিডল অর্ডারে সাকিব আল হাসানের (৮৬ বলে ৫৩) তিন-তিনটি হাফসেঞ্চুরি বাংলাদেশকে পৌঁছে দেয় জয়ের বন্দরে।
এর পর বিশ্বকাপে আরও তিনবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত আর বাংলাদেশ। কিন্তু আর একবারও জয়ের দেখা পায়নি। আর কোনো বাংলাদেশিও ম্যাচসেরা নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। দলকে জেতানো সম্ভব হয়নি, ম্যাচসেরাও হতে পারেননি কেউ।
কিন্তু ইতিহাস জানাচ্ছে, বাংলাদেশের এক সাহসী যোদ্ধা ঠিক ব্যাট হাতে প্রতিবার জ্বলে উঠে মাঠ মাতিয়েছেন। ভারতীয় বোলারদের শাসন করেছেন। খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তিনি কে?
তিনি সাকিব আল হাসান। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর পর বিশ্বকাপে সাকিব যতবার ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমেছেন, প্রতিবারই হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন।
আসুন খুব ছোট্ট করে দেখা যাক সে পরিসংখ্যান। ২০০৭ সালের কথা এরই মধ্যে বলা হয়েছে। উইকেটশূন্য সাকি ৮৬ বলে ৫৩ রানের আত্মপ্রত্যয়ী ইনিংস উপহার দিয়ে প্রথম জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
তারপর ২০১১ সালে ঢাকার শেরে বাংলায় (৫৫), ২০১৫ সালের অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে (৫২) আর সর্বশেষ ২০১৯ সালে ম্যানচেস্টারের এজবাস্টনে (৭৪ বলে ৬৬) প্রতিবার পঞ্চাশের ঘরে পা রাখার দুর্দান্ত কৃতিত্ব দেখান সাকিব।
কিন্তু বিশ্বকাপে বল হাতে ভারতের সাথে নিজেকে খুঁজে পাননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। প্রথমবার উইকেটশূন্য। পরের তিনবার (১/৬১, ১/৫৮ ও ১/৪১) পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
আগামীকাল পুনেতে কী হবে? এবার কি ব্যাটের পাশাপাশি বল হাতেও জ্বলে উঠবেন সাকিব? মাশরাফির পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ম্যাচ জেতানো বোলিং স্পেল উপহার দিতে পারবেন টাইগার ক্যাপ্টেন?
ভাবছেন, যাকে নিয়ে এত কথা, সেই বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব বৃহস্পতিবার ভারতের বিপক্ষে খেলবেন তো? কোটি টাকার প্রশ্ন। বিশ্বকাপ কভার করতে যাওয়া বাংলাদেশি সাংবাদিকরা টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে এ প্রশ্নের উত্তর জানতে মুখিয়ে আছেন।
জানা গেছে, আজ বুধবার পুনেতে শেষ প্র্যাকটিস সেশনে অংশ নেননি সাকিব। তবে গতকাল মঙ্গলবার বেশ খানিকটা সময় নেটে কাটাতে দেখা গিয়েছে টাইগার অধিনায়ককে।
চোট কাটিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার ভারতের সাথে খেলবেন কিনা, টিম ম্যানেজমেন্ট তা জানায়নি। ট্যুর অপারেশন্স ম্যানেজার রাবিদ ইমাম জাগো নিউজকে বলেছেন, ম্যাচের দিন সকালে অবস্থা দেখে বলা যাবে।
ভক্ত ও সমর্থকদের আশা, অধিনায়ক সাকিব খেলবেন। ব্যাট ও বল হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন। আর তাতেই সবশেষ টানা তিন বিশ্বকাপে পরাজয়ের বৃত্ত ভেদ করে আবার জয়ের পথ খুঁজে পাবে বাংলাদেশ। স্বপ্নটা কি খুব বেশি? ব্যাটে-বলে সাকিবের মতো পারফরমার জ্বলে উঠলে যে কোনো স্বপ্নই তো বাস্তব হওয়া সম্ভব!