নিজস্ব প্রতিবেদক: কাপ্তাই হ্রদে স্বচ্ছ নীল জলরাশিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ঐতিহ্য নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। নৌকা বাইচের নৌকার বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর মাঝি মালাদের নাচ গানে মুখরিত হয়ে উঠে কাপ্তাই হ্রদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও বুধবার উৎসাহ-উদ্দীপনায় এই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হল। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় ও রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থা এই নৌকা বাইচ আয়োজন করে।
এদিকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুসজ্জিত নৌকা নিয়ে প্রতিযোগীরা অংশ নেন। প্রতিযোগিতায় পুরুষ দলের পাশাপাশি নারী দলও অংশ নেন। যা প্রতিযোগিতায় ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করে। তাদের দলগত অংশগ্রহণ দর্শনার্থীদের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। যেন পুরুষের সাথে নারীদেরও এগিয়ে যাওয়ার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
কাপ্তাই উপজেলা থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা পরানী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এবছরই প্রথম নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। সবার মুখে মুখে শুনেছি নৌকা বাইচের কথা, তাই দেখতে এলাম। খুবই ভালো লাগছে।
বিলাইছড়ি উপজেলা থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা বাবুল চাকমা বলেন, প্রতিবছরই আমাদের এলাকা থেকে এই প্রতিযোগিতা দেখতে আসি। আমাদের পাড়া থেকে পুরুষ ও মহিলা দল অংশ নেয়। সকালেই বোট নিয়ে এখানে এসেছি। তাদের সাথে আমিও এসেছি নৌকা বাইচ দেখতে।
নৌকা বাইচে চারটি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুইজনের মহিলা ডিঙ্গি নৌকায় প্রথম স্থান অর্জন করে শর্মিলা ত্রিপুরার দল। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে শেফালী চাকমার দল। তৃতীয় স্থান অর্জন করে পদ্মা দেবীর দল। পুরুষ দ্ইুজনের সাম্পানে প্রথম স্থান অর্জন করে মো. জামাল উদ্দিনের দল। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে জলকান্তি ত্রিপুরার দল ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে মো. জিহাদের দল। এছাড়া ১৫জনের মহিলা বড় নৌকায় প্রথম হয় সুমিতার ত্রিপুরার দল, দ্বিতীয় হয় আলো ত্রিপুরার দল ও তৃতীয় হয়েছে চিকনা ত্রিপুরার দল। ২১ জনের পুরুষ বড় নৌকায় প্রথম স্থান অর্জন করে চিরমনি ত্রিপুরার দল, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে শংকর ত্রিপুরার দল ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে প্রশান্তি ত্রিপুরার দল। অনুষ্ঠানে বড় নৌকায় প্রথম স্থানকারী দলকে ৫০হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্থানকারী দলকে ৩৫ হাজার ও তৃতীয় স্থানকারী দলকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়।
প্রতিযোগিতা শেষে জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার তুলে দেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। এতে গেস্ট অব অনার ছিলেন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নৌকা বাইচ আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব হাজি মুছা মাতব্বর।
আয়োজকরা জানান, বঙ্গবন্ধুর পরিবার আমাদের প্রতি যে ত্যাগ এবং ছোট্ট শেখ রাসেলকে এই দিনে স্মরণ করতে এই আয়োজন। পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং মানুষকে আনন্দ দিতেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারো এই নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ আরো আকর্ষণ হয়ে উঠবে। আবহমান গ্রাম-বাংলার কৃষ্টি ধরে রাখতে এভাবে প্রতিবছরই এখানে নৌকাবাইচের আয়োজন হবে বলে জানান তারা।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন, নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখে খুবই মুগ্ধ হয়েছি। বহু মানুষ নৌকা বাইচ দেখতে এসেছেন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ দেখে সত্যি খুব আনন্দিত হয়েছি। শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকীতে এমন সম্প্রীতির আয়োজনে আয়োজক কমিটিকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য যে, প্রতি বছর এই বছর শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কাপ্তাই হ্রদে নৌকা বাইচে দর্শনার্থী অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে । গত বছরও শহীদ মিনারে নৌকা বাইচ তিল পরিমান জায়গা ছিল না।