ওয়েব ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। পর্যায়ক্রমে পুরো দেশ অচল করে দিতে চায় তারা। নির্বাচনের আগে অনেকটা চূড়ান্ত এ কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বেশ আশাবাদী। তবে উল্টো চিত্র তৃণমূলে। হরতাল-অবরোধসহ আগের কর্মসূচি ও শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা দেখে অসহযোগ কর্মসূচিতেও নিরাশা দেখছে তৃণমূল।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্রমতে, অসহযোগ কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে পেশাজীবী বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করার জোর তৎপরতা চলছে। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) থেকে অসহযোগ কর্মসূচির প্রতিফলন দেখা যাবে এবং জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে আরও ইতিবাচক পরিস্থিতি দৃশ্যমান হবে।
তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে কয়েক দফায় হরতাল-অবরোধ চলছে ঢিলেঢালাভাবে। এসব কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তত বাড়ছে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পুলিশি তৎপরতায় জ্যেষ্ঠ নেতারা মাঠে যদি নামতে না পারেন সেক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মাঠে নামার প্রেরণা হারাবে।
অসহযোগ মানেই অসহযোগ। ক্রমেই সবকিছু অচল করে দেবে জনগণ। অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো সংশয় নেই। অসহযোগ আন্দোলনে সব পর্যায়ের নেতাকর্মী মাঠে নামবেন। গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঢাকাসহ সারাদেশে দলটির আত্মগোপনে থাকা নেতাদের বেশিরভাগ মাঠে নেমেছিলেন। তাই অসহযোগ আন্দোলনেও নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন।- বেগম সেলিমা রহমান
প্রশাসনসহ সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় আওয়ামী লীগের দাপট। সাংগঠনিকভাবেও গত ১৫ বছরে আরও শক্তিশালী হয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরবাড়ি ছাড়া, আত্মগোপনে অথবা কারাগারে। প্রত্যেক নেতাকর্মীর কাঁধে মামলা-হামলার আতঙ্ক। এ পরিস্থিতিতে অসহযোগ কর্মসূচি কতটুকু হালে পানি পাবে- তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।
ফলে চলমান আন্দোলনে নির্বাচন বন্ধ হবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। নির্বাচনের পর পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষ থেকে যদি কোনো চাপ আসে সেক্ষেত্রে কোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বিএনপির বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাকর্মীদের এমন সংশয় থাকলেও পদ-পদবি হারানোর ভয়ে তারা নাম প্রকাশ করতে চান না।
তাদের অভিযোগ, আত্মগোপনে থাকা নেতাদের সঙ্গে তাদের বেশিরভাগই এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নেতারা শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকলেও মাঠে তাদের দেখা নেই।
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের আদালতে হাজিরা না দেওয়া কিংবা সরকারকে সব ধরনের ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল এবং অন্য প্রদেয় স্থগিত করার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও অন্ধকারে তারা। জনসাধারণ তো দূরের কথা, দলের অলংকৃত নেতারাও সেটা মানতে পারবেন না বলে মনে করেন তারা।
গত বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ভিডিওবার্তার মাধ্যমে অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পরে তাকে উদ্ধৃত করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচিটি আবার ঘোষণা দেন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘আসলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের মাঠে সক্রিয় সব নেতার নামে অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছে। তাই নেতাদের অনেকে মাঠে কম নামলেও ভিন্নভাবে কাজ করেছেন।’
অসহযোগ কর্মসূতিতে সবাই একযোগে মাঠে নামবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অসহযোগ মানেই অসহযোগ। ক্রমেই সবকিছু অচল করে দেবে জনগণ।’
অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো সংশয় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনে সব পর্যায়ের নেতাকর্মী মাঠে নামবেন। গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঢাকাসহ সারাদেশে দলটির আত্মগোপনে থাকা নেতাদের বেশিরভাগ মাঠে নেমেছিলেন। তাই অসহযোগ আন্দোলনেও নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন।’