বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:সারা দেশেই ৩০ জুন শেষ হচ্ছে চলতি লকডাউনের মেয়াদ। এরই মধ্যে বাংলায় লকডাউনের সময়সীমা বেড়ে ৩১ জুলাই হতে যাচ্ছে। বুধবার সর্বদল বৈঠকের পর এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সময়ে কোনও স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে না। তবে উচ্চমাধ্যমিকের স্থগিত থাকা তিনটি পরীক্ষা হবে কিনা, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে এদিন তিনি জানিয়ে দেন।
একই সঙ্গে তিনি এ কথাও জানিয়ে দেন, জুলাই মাসেও লোকাল ট্রেন বা মেট্রো রেলের পরিষেবা চালু হবে না। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে লোকাল ট্রেন বা মেট্রো রেলের তরফে পরিষেবা চালু করতে তারা প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছিল। রাজ্য সরকারের অনুমতি পেলেই ট্রেন বা মেট্রো চলবে, এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এই পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে লোকাল ট্রেন বা মেট্রো রেল চালানোর অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলায় লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে রাজ্য সরকার শীঘ্রই নির্দেশিকা জারি করবে।
এদিন সর্বদল বৈঠকেই প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনও দলই মতামত দিতে রাজি হয়নি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘লকডাউন জারি করার সময় আমাদের মতামত নেওয়া হয়নি। তা হলে আজ নেওয়া হচ্ছে কেন? বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজ্য সরকারই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক।’ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এদিন নবান্নের সভাঘরে সর্বদল বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে চলে তিনঘণ্টারও বেশি সময়। উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া শাসক দল তৃণমূলের তরফে উপস্থিত ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির তরফে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদার ও মনোজ টিগ্গা, সিপিএমের তরফে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের তরফে প্রদীপ ভট্টাচার্য, অসিত মিত্র প্রমুখ।
এর আগে করোনা এবং আমফানের ত্রাণ বিলি নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন বিরোধী নেতারা। এদিন বৈঠকে সেই প্রসঙ্গও ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী সকলকেই জানান, কেউ বঞ্চিত হলে সঙ্গে সঙ্গে আবেদন করুন। ত্রাণ নিয়ে কোনও দলবাজি হবে না। বৈঠকের পরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি করোনা এবং আমফানের পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিভিন্ন দলের নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেন। কমিটিতে থাকবেন তৃণমূলের তরফে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির তরফে দিলীপ ঘোষ, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী–সহ অন্য দলের নেতারাও। এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী জানান, সুন্দরবনের জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। নীতি আয়োগকে চিঠি লিখে প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করা হবে।
এদিকে, বুধবার সকালে করোনায় মৃত্যু হল শাসক দল তৃণমূলের বিধায়ক তমোনাশ ঘোষের। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর বাইপাসের অ্যাপোলো হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। কয়েকদিন ধরে তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর জীবন সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। মৃত্যুর সময় তমোনাশ ঘোষের বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। তাঁর মৃত্যুর পরই টুইট করে শোক প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস–সহ প্রায় সব দলের তরফেই শোক প্রকাশ করা হয়। তমোনাশ ঘোষ অ্যাপোলো ভর্তি হওয়ার পর রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু দ্রুত সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান। শুধু ফেরা হল না তমোনাশের।
তবে বিষয়টি নিয়ে শাসক দল ও সরকারকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘রাজ্যে করোনা চিকিৎসার হাল যে কেমন, তা বোঝা যায় এই ঘটনায়। শাসক দল তাদের বিধায়ককেই যখন বাঁচাতে পারে না, তখন রাজ্যে করোনা চিকিৎসায় সাধারণ মানুষের অবস্থা যে কী রকম, তা বুঝতে অসুবিধে হয় না।’ সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের তরফে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিমরা তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। ফিরহাদ বলেন, ‘এই দুঃখজনক ঘটনার সময়ও রাজনীতি করার কথা বিজেপির মাথাতেই একমাত্র আসতে পারে।’