1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

রায় জালিয়াতি করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংকটে ফেলার কারিগর যিনি

  • Update Time : শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ৮১ Time View

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল

নির্বাচনব্যবস্থা তছনছের কারণে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের শুরুটা হয়েছিল আপিল বিভাগ কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে। আর এই সংকট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারিগর ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের কারণেই পরপর তিনটি ভোটারবিহীন ও বিতর্কিত নির্বাচন কর্তৃত্ববাদী করে তুলেছিল আওয়ামী লীগ সরকারকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সংকট গভীর থেকে গভীরতম হওয়ার পরিণতি ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতন।

রায় নিয়েও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিলেন বিচারপতি খায়রুল হক। আপিল বিভাগের ২০১১ সালের ১০ মে প্রদত্ত (৪-৩) বিভক্ত সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়েছিল, ‘সংসদ চাইলে আরো দুটি নির্বাচন এ ব্যবস্থায় (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে) হতে পারে। তবে এতে বিচার বিভাগকে জড়িত করা যাবে না। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বাদ রেখে সংসদ এ সরকার পদ্ধতি সংস্কার করতে পারে।’

সংক্ষিপ্ত রায়কে ‘শিরোধার্য’ হিসেবে প্রচার চালিয়ে এবং পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বহু আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন নবম সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার প্রায় ১৬ মাস পর, অর্থাৎ ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। যখন এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায় তখন খায়রুল হক আর প্রধান বিচারপতি ছিলেন না। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায়ে দেখা যায়—সংক্ষিপ্ত রায়ে থাকা আরো দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে পারার কথাটি নেই। এমনকি, সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও সংসদ বহাল থাকার কথাও যুক্ত হয় পূর্ণাঙ্গ রায়ে। সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ের এই ভয়াবহ অসংগতি নিয়ে তখনই জোরালো বিতর্ক উঠেছিল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় প্রদানকারী বাকি ছয় বিচারপতির মধ্যে তিন জন খায়রুল হকের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। ৩৪২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে একমত হয়েছেন মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এস কে সিনহা ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তবে বিচারপতি মো. ইমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে মত না দিয়ে বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেন।

জালিয়াতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেওয়ার পুরস্কার হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর আইন কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন খায়রুল হক। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের মাধ্যমে সৃষ্ট পটপরিবর্তনের কারণে তিন দিন আগে খায়রুল হক নিজেই আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে সরে দাঁড়ালেও সংকটের যে বীজ তিনি রোপণ করেছিলেন, সেই সংকটের বড় ধরনের খেসারত দিতে হয়েছে জাতিকে, ঝরেছে ছাত্র-জনতার অগণিত প্রাণ আর রক্ত।

দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ১৯৯৬ সালে এলেও ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন। ১৯৯১ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা। এরশাদের পদত্যাগের পর সেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন—এ নিয়েও দেখা দিয়েছিল নানা মত। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিশেষ করে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। যিনি ছিলেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তার সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে যারা ছিলেন তারাও ছিলেন সর্বজন গ্রহণযোগ্য। সেই সরকারের অধীনে দেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বিএনপি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে। তবে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে আবারও সৃষ্টি হয় সংকটের। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি সরকার। প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারাও ছিলেন মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ঐ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল, যেই নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ।

সংবিধানে থাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অনুযায়ী ২০০১ সালেও গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যার প্রধান ছিলেন বিচারপতি লতিফুর রহমান। এই সরকারের উপদেষ্টারাও ছিলেন মোটামুটি ক্লিন ইমেজের। তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে বিএনপি।

তবে ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের মেয়াদের শেষদিকে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়, স্বাভাবিক নিয়মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে যাওয়া তত্কালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে নিয়ে। কোনো একসময় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে থাকায় কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা যাবে না বলে আওয়ামী লীগ ও দলটির মিত্র দলগুলো আন্দোলনে নামে। এ নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়ায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা। গঠিত হয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ।

বিচাপতি কে এম হাসান কোন কালে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন—এই অজুহাতে তাকে প্রধান উপদেষ্টা হতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। অথচ সেই আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে সরাসরি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বন্দোবস্ত করে। আর এই প্রক্রিয়ায় স্থপতি হিসেবে কাজ করেন বিচারপতি খায়রুল হক।

আদালতের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করিয়ে এর সুযোগ নেয় আওয়ামী লীগ। ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে পরপর তিনটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে টানা ক্ষমতায় আসে দলটি। অথচ ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এই চারটি নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতিও ছিল আশানুরূপ। আর আওয়ামী লীগের অধীনে করা নির্বাচনগুলোতে ভোটারের প্রকৃত উপস্থিতি ছিল মাত্র ৫-১০ শতাংশের মতো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মতো সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থাও বাতিলের ক্ষেত্রে আদালতকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৮ সালে কোটা-সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের মুখে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একেবারে কোটা পদ্ধতি বাতিলই করে দেন। পরে নিজেই বলেছেন, ‘আমি রাগ করে বাতিলই করে দিয়েছি’। রাগ করে বাতিল করলেও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তিনি আবার কোটাব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে কৌশলে আদালতকে দিয়ে আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করিয়ে নেন। আর সেখান থেকেই শুরু হয় এবারের আন্দোলন। যে আন্দোলন ধাপে-ধাপে রূপ নেয় গণ-আন্দোলনে। যেই আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..