রাকিব শান্ত, ব্যুরো প্রধান উত্তরবঙ্গ: 

তীব্র ছাত্রআন্দোলনে শেখ হাসিনার স্বৈর শাসনের অবসান এবং শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সারাদেশে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মির পাশাপাািশ আওয়ামী দু:শাসনের সহযোগি সাংবাদিকরা নিজেদেরকে জনচক্ষুর আড়ালে রেখেছেন। কিন্তু বগুড়ার কতিপয় আওয়ামী দোসর সাংবাদিক এখনো দাপট দেখানোর পা৭য়তারা করছে। বিশেষ করে দীর্ঘ প্রায দেড়যুগ প্রেসক্লাবকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করা ব্যক্তিরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও পেশাদার সাংবাদিকদের ওপর খবরদারির অপচেষ্টায় লিপ্ত।

এমতাবস্থায় দীর্ঘদিন সদস্যপদ বঞ্চিত সাংবাদিকরা এসকল মুখচেনা দালাল সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তারা নিয়মিত প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। তারই অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলনের পক্ষ থেকে বগুড়া প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক ওযাসিকুর রহমান বেচানের নিকট স্মারলিপি দেয়া হয়েছে।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে- “গণমাধ্যমে কর্মরতরা দীর্ঘদিন নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পেশাগত কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকে নিজেদের মত করে ব্যবহার করেছে। সত্য প্রকাশ করতে গেলে কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে বহু সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে আঘাত করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা নামের একটি কালো আইন দ্বারা শতশত সাংবাদিককে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সেই সরকারের পতনের পর সবাই প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর বগুড়া প্রেসক্লাবও স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে পেশাদার সাংবাদিকদের হাতে। কিন্তু দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি যে, সাবেক অবৈধ কমিটির কতিপয় সদস্য এখনো প্রেসক্লাবে তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিয়মিত আসছেন। তাদের ষড়যন্ত্র এখনো থেমে যায়নি। কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি প্রেসক্লাবে সারাক্ষণ বসে আপনার (আহ্বায়কের) কথপোকথন মোবাইলে রেকর্ড করে সাবেক গংদের কাছে প্রেরণ করছেন। প্রেসক্লাবের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য এখনি সেই সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এখন স্বৈরাচার সরকার নেই। সংগত কারণে আওয়ামী লীগের দালালদের সমিহ করার কোন প্রয়োজন আমরা দেখি না। তারা পাওয়ার যোগ্য না অনেক আগেই তারা তাদের নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং চিহ্নিত দালাল এবং অর্থ লুটতরাজকারীদের সদস্যপদ বাতিল করে তাদেরকে প্রেসক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার জোর নাই জানাচ্ছি। সেই সাথে পেশাদার সাংবাদিক যারা এখনো প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারেননি তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সদস্য পদ প্রদানের অনুরোধ করছি। অপর দিকে বিগত ১৬ বছর ধরে পূর্বের সরকারের পা চাটা সাংবাদিকদের কারণে অনেক সরকারি অফিস পেশাদার সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন প্রদান করেননি। সেই সব অফিসগুলোতে প্রথম সারির বিবেচনাক্রম অনুসরণ করে পত্রিকার সাংবাদিকদের একটি তালিকা তৈরি করে আপনাদের সীল সাইন করে অফিসগুলোতে প্রেরণের অনুরোধ করছি। যাতে এযাবৎ যারা সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা যেন পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞাপন পায়। সেই সাথে বগুড়ার কিছু স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ দলীয় সন্ত্রাসীদের পরিচয়পত্র নিয়েছে মর্মে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তারা মোটরসাইকেল মাইক্রোতে স্টিকার লাগিয়ে অপকর্ম করে বেড়ায়। যার দায় সাংবাদিক সমাজের উপর পড়ে। আপনাদের উদ্যোগে প্রত্যেকটি সংবাদপত্রের মালিক/সম্পাদকদের চিঠি আকারে প্রেরণ করে প্রকৃত সাংবাদিকদের তালিকা হাতে নিতে হবে। তারপর পথে ঘাটে স্টিকারধারী কার্ডধারীদের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। এতে আমাদের পেশার হারিয়ে যাওয়া মর্যাদা কিছুটা ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করি।”

এসময় উপস্থিত ছিলেন বগুড়া প্রেসক্লাবের যুগ্মআহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জহুরুল ইসলাম ও মোস্তফা মোঘল, বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলন, বগুড়া জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক প্রতীক ওমর, সমন্বয়ক আব্দুল ওয়াদুদ, ফেরদৌসুর রহমান, রাকিবুল হাসান শান্ত, এনাম আহমেদ সহ প্রমূখ।