ওয়েব ডেস্ক: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিএনপির অফিসে আওয়ামী লীগ কর্মীর টেবিলে পা তুলে সিগারেট খাওয়ার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে।
হারুন অর রশিদ নামে সেই আওয়ামী লীগ কর্মী রাত-দিন ওই অফিসেই আড্ডা দেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া জুলাই বিপ্লবের পর তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে চাইলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সহযোগিতা ও অভয়ে এলাকায় থেকে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২৫ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ছবিটি ভাইরাল হয়। সেই থেকে চলছে সমালোচনার ঝড়।
জানা গেছে, ‘জিয়ার সৈনিক’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে হারুন অর রশিদের টেবিলে পা তোলা ও হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখাছিল, ‘বাহ্! আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি কুখ্যাত ভূমি দস্যু একাব্বর চেয়ারম্যানের ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ী হারুন বলে কথা। বিএনপির অফিসে হাতে সিগারেট আর টেবিলে পা তুলে বসে থাকা সাধারণ জনগণকে মোটেও অবাক করেনি। কারণ এই এলাকায় স্বজনপ্রীতি রাজনৈতিক হালচাল। কিন্তু প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগের সময় এই স্বজনগুলো কোথায় ছিল?’
জানা গেছে, ওই অফিসে উপজেলার লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা বসেন। তবে এটি ২নং ওয়ার্ড বিএনপির অফিস। অফিস উপজেলার গারোবাজারে অবস্থিত। হারুন ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী। তার বাড়ি সিংহচালা গ্রামে। তার বাবা একাব্বর আলী ছিলেন বৃহত্তর রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর হারুন পালিয়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকা থেকে ফেরত আসেন। পরবর্তীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে আসেন হারুন। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্যতা। এর ফলেই তিনি পৌঁছে যান বিএনপির অফিস পর্যন্ত। ওই অফিসে দিন-রাত আড্ডা দেন তিনি।’
স্থানীয়রা জানান, তিনমাস আগে বিএনপির এই অফিস উদ্বোধন করা হয়। ১৫ দিন না যেতেই হারুন ওই অফিসে যাতায়াত শুরু করেন। সঙ্গে নিয়ে যান আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাকর্মী। রাত-দিন অফিসে আড্ডা দেন।
হারুন আর রশিদ বলেন, ‘এটা আসলে বিএনপির অফিস না। এটা খোলা ঘর। কারণে-অকারণে ওই ঘরে যাওয়া হয়। ওই ঘরটি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ইকবাল তালুকদারের ভাই খোরশেদ তালুকদারের। সম্পর্কে ইকবাল তালুকদার আমার মামা। ছবিটি যে রাতে তোলা হয়েছে সেই রাতে ওই ঘরে আড্ডায় আমার সঙ্গে ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম।’
উপজেলা বিএনপির সদস্য ও লক্ষ্মীন্দর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী আকন্দ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতার দোষ কম। আমাদের নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা এই অফিস পরিচালনা করেন। অর্থাৎ সিনিয়ররা আওয়ামী লীগদের সঙ্গে নিয়ে অফিসে বসেন। বিএনপির সিনিয়ররা আওয়ামী লীগ ছাড়া চলতে পারেন না। জুলাই বিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন হারুন। কিন্তু আমাদের কিছু লোক অভয় দিয়ে এলাকায় রাখার ব্যবস্থা করেছে। মনে হয় অফিসটা আমাদের না, আওয়ামী লীগের অফিস।’
লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। গারোবাজারের ওই অফিসটা ইউনিয়ন বিএনপির না, ওইটা ২নং ওয়ার্ড বিএনপির অফিস। ওইখানে বসেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ইকবাল তালুকদার।’
উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইকবাল তালুকদার বলেন, ‘লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা এ অফিসে বসেন। আমার বোনের দেবরের ছেলে হারুন। সম্পর্কে আমার ভাগ্নে লাগে। কখন সে অফিসে এসে এই কাজ করছে আমি জানি না।’
ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, যদি কেউ আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’