আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। যদিও হামলায় ঘাঁটির উল্লেখযোগ্য কোনও ক্ষতি হয়নি, কারণ সেটি আগেই নিরাপত্তাজনিত কারণে খালি করে ফেলা হয়েছিল।
তবে প্রশ্ন উঠেছে- প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশগুলোতে থাকা অন্যান্য মার্কিন ঘাঁটি বাদ দিয়ে কেন কাতারের এই বিশেষ ঘাঁটিকেই টার্গেট করল ইরান?
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা ছিল মূলত প্রতীকী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২২ জুন দাবি করেন, এই তিন স্থাপনায় সফল হামলা চালানো হয়েছে এবং সেগুলো ধ্বংস হয়েছে। তবে
ইরান হামলার কথা স্বীকার করলেও গুরুতর ক্ষয়ক্ষতির দাবি অস্বীকার করেছে।
ভৌগোলিক ও কৌশলগত সুবিধা
ইরানি কৌশল বিশ্লেষক হুসেইন আরিয়ান বিবিসিকে বলেন, ইরান সম্পূর্ণরূপে অবগত ছিল যে ঘাঁটিটি খালি। ইরানে ইসরায়েলের আক্রমণের আগে ওয়াশিংটন বেশ কয়েকটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, যার মধ্যে কাতারে তাদের ঘাঁটির কর্মীদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের বিষয়টিও ছিল।
তিনি বলেন, আল-উদেইদ ঘাঁটি ইরান থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ছিল সহজতম ও সবচেয়ে কাছের লক্ষ্য।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুসারে, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঘাঁটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থিত বৃহত্তম মার্কিন বিমান বাহিনী স্থাপনা। ঘাঁটিটি কাতারের রাজধানী দোহার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত
অ্যাক্সিওস প্রকাশিত তথ্য মতে, সেখানে প্রায় ৮ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে এবং এটি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের সদর দপ্তরও।
ইরানি বিশ্লেষক হুসেইন আরিয়ানের মতে, ইরান কাতারি রাজনীতিবিদদেরকে জানিয়েছিল যে তারা এই হামলা চালাবে এবং তাদের মাধ্যমে আমেরিকানদেরকেও জানানো হয়েছিল।
তাই, তারা যা করেছে সেটা আসলে প্রতীকী ছিল, যা ইরানের সেই আচরণের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়, যেটি তারা ২০২২ সালে ইরাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার সময় দেখিয়েছিল।
সেই সময় ইরান ইরাকের আইন আল-আসাদ ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করেছিল। সুতরাং, এটি আসলে একটি প্রতীকী হামলা এবং এর মধ্য দিয়ে ইরানের জনগণের মাঝেও তারা প্রচারণা চালাতে চেয়েছে যে আমরা কিছু একটা করেছি।
কাতারই একমাত্র উপসাগরীয় রাষ্ট্র যেটি ইরান-বিরোধী অক্ষের সরাসরি অংশ না হলেও সেখানে বৃহত্তম মার্কিন ঘাঁটির অবস্থান রয়েছে। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে, ২০১৭ সালে উপসাগরীয় সংকটের পর থেকে কাতার যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে আসছে, সাম্প্রতিক এই হামলার মধ্য দিয়ে সেটিই এখন পরীক্ষিত হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা