ওয়েব ডেস্ক: সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। প্রতিদিন সকাল-বিকেল এই হাওর পাড়ের মানুষজনের কণ্ঠে শোনা যায় প্রকৃতি, মাছ ও পাখির গল্প। কিন্তু সেই গল্পে যোগ হয়েছে এক অন্ধকার অধ্যায়—অবৈধ কারেন্ট জাল ও বেড় জালের ভয়াবহ দৌরাত্ম্য।

শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওর ও এর আশেপাশের এলাকায় পরিচালিত হয় প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে অবৈধভাবে মাছ ধরার দায়ে পাঁচজনকে মোট দুইটি মামলায় ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় ৫টি বেড় জাল ও ৩টি কারেন্ট জাল। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ লাখ টাকা।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মধ্যনগর উপজেলার দুগনই, চামরদানী গ্রামের কার্তিক মিয়া (২৮), খলিল মিয়া (৩২), কাদিপুর, চামরদানী গ্রামের অলি ইসলাম (৩৫), বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর  গ্রামের মোশাহিদ মিয়া (২২),  রংচী গ্রামের দুলাল (৫০)।

মধ্যনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান জানান, এই ধরনের জাল হাওরের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করছে। কারেন্ট জালে পোনা-মাছ থেকে শুরু করে জলজ পোকামাকড়, এমনকি ক্ষুদ্র শামুক পর্যন্ত ধরা পড়ে। ফলে খাদ্যশৃঙ্খল ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হাওরপাড়ের সচেতন মহল জানান, এই উদ্যোগে সাময়িক স্বস্তি মিললেও টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী তদারকি, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং জেলে সম্প্রদায়ের জন্য টেকসই বিকল্প কর্মসংস্থান প্রয়োজন। তা না হলে এই অভিযানও হয়তো অন্য দিনের মতোই ক্ষণিকের খবর হয়ে যাবে।

মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু এই এলাকার নয়, এটি দেশের এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের অংশ। তাই এখানে অবৈধভাবে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই। হাওরের দেশীয় মাছ ও প্রকৃতি রক্ষায় আমরা এই অভিযান পরিচালনা করেছি। বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জব্দ করা জালগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলবে।

তবে আমি মনে করি, প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সচেতন হতে হবে। স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া অবৈধ এসব কার্যক্রম বন্ধ করা গেলেও তা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হবে না। আমরা চাই হাওর বাঁচুক, প্রকৃতি বাঁচুক।

এ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন মধ্যনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিবুর রহমান ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান।