দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাবে তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি প্রাথমিকসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, এর কোনো ঠিক নেই। তবে ক্ষতি পোষাতে অনলাইন ও টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু এতে করেও সফল বলতে পারছেন না অনেকেই।
এদিকে অনেক দেরিতে প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। যার ফলে পিছিয়ে গেছে একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম। অন্যদিকে স্কুল-কলেজে প্রথম, দ্বিতীয় সাময়িক ও অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষাও হয়নি। এমনকি অনিশ্চতায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাসহ জেএসসি, জেডিসি, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও।
এমন পরিস্থিতিতে বেশ কিছু বিকল্প উপায় নিয়ে কাজ করার কথা একাধিকবার জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতি আপাতত ঠিক না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাওয়ায় এসব বিকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলেও জানায় শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষা ক্যালেন্ডারে বড় পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সে মোতাবেক কমতে পারে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সংখ্যা। আর চলতি শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরের পরিবর্তে মার্চ পর্যন্ত চলবে। আগামী শিক্ষাবর্ষ হবে ৯ মাসে। অত্যাবশ্যকীয় ছাড়া বাকি সব ছুটি বাতিল করার পরিকল্পনাও চলছে।
শনিবার এডুকেশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত ‘করোনায় শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব তথ্য জানান। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সংখ্যা কমানো নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে আসার ১৫ দিন পর এই পরীক্ষা নেয়া হবে।
তিনি জানান, ১৫ দিন আগে শিক্ষার্থীদের নোটিস দিতে হবে। প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিতে সময় দিতে হবে। এবারের এইচএসসির সিলেবাস কমানোর যৌক্তিকতা নেই, কারণ তারা তাদের সিলেবাস সম্পন্ন করেছে। এখন যেটা হতে পারে পরীক্ষা নেয়া হবে। আবার লাখ লাখ পরিবার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের মানুষ, শিক্ষক সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলব? আমরা কম সময়ে করতে পারি কি না, কম পরীক্ষা নিতে পারি কি না- সবকিছুই ভাবছি।
শিক্ষাবর্ষের বিষয়ে দীপু মনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে কাউকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। কোনকিছু না পড়িয়েও পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা যাবে না। সেজন্য ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী মার্চ পর্যন্ত চলতি শিক্ষাবর্ষ বাড়ানো হতে পারে। এছাড়া ছুটি কমিয়ে শ্রেণি ঘণ্টা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষেও ছুটি কমানো হবে।
তবে জেএসসি-জেডিসি, প্রাথমিক-ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী সুস্পষ্ট কিছু বলেননি। তিনি বলেন, শুধু পরীক্ষার জন্য সিলেবাস তৈরি হয় না, পরবর্তী ক্লাসে ওঠার জন্য যা শেখা প্রয়োজন তা শেখানো হয়। মূল্যায়নের জন্য বছর শেষে পরীক্ষা হয়। গ্যাপ হয়ে গেলে পরবর্তীতে বিষয়টি তাদের ভোগাবে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা কাজ করছে।
করোনা মহামারীর মধ্যে টিউশন ফি আদায়ে মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানান দীপু মনি। এসময় যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীদের বেতন ছাড় দিতে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ফি না পেলে শিক্ষকদের কি করে বেতন দেবে? শিক্ষকরা তো অধিকাংশই বেতনের উপর নির্ভরশীল। টিউশনিও বন্ধ। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য আছে তারা ফি কিস্তিতে বা কিছুদিন বাদ দিয়ে নিক। যতটা ছাড় দেয়া যায় সেটা চেষ্টা করবেন বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদেরও ছাড় দিতে হবে। সন্তান পড়াশোনা করছে, এখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ মানে বেতন বন্ধ করা যায় না। এসময় শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প বা বিনামূল্যে ইন্টারনেট, ডিভাইসসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন