বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:শুধু করোনার ত্রাণ বিলিতেই নয়, আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে রাজ্য সরকার ও শাসক দল। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা ছিল অব্যাহত। বুধবার সে কথারই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, রাজ্যে দুর্নীতি সিপিএমের দান। তাদের সময় সেই দুর্নীতি হত ১০০ শতাংশ।
এমন কথাও এদিন তিনি বললেন, ‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সিপিএম আমলের সেই দুর্নীতি ৯০ শতাংশই কমিয়ে দিয়েছে। তবে সিপিএম যে ভাবে দুর্নীতি ছড়িয়ে দিয়েছিল, সেই অভ্যাস এখনও অনেকের যায়নি। তাই এখনও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা। একবারেই সমস্ত কিছু দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব নয়। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত করেই ছাড়বে বর্তমান সরকার।’ এদিন তিনি বিরোধীদের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘দুই–একটা ছোট ঘটনা নিয়ে কিছু রাজনৈতিক নেতা রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। এটা ঠিক নয়। আমি সততার প্রশ্নে বরাবরই কড়া। এমনকী, আমার দলকেও আমি ছেড়ে কথা বলি না। মানুষের টাকা যাতে কেউ না নেন, সে ব্যাপারে আমি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছি। দুর্নীতিতে যাঁরা জড়িয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর করছে। অ্যারেস্ট করছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মানতে চাননি বিরোধী দলের কোনও নেতাই। বিশেষ করে মুখ খুলেছে সিপিএম। দুর্নীতি নিয়ে সিপিএমকেই আক্রমণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এদিনই পাল্টা আক্রমণ শানালেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘সিপিএম জমানায় এতই যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে, তা হলে ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও কেন একজনকে জেলে ঢোকাতে পারলেন না? ১০ বছর ধরে কমিশন বসিয়েও কেন একজনকে ধরতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী?’ তিনি চাঁছাছোলা ভাষায় বলেন, ‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ৩০ কোটি টাকা খরচ করে কমিশন বসিয়েছে। তাদের কাজ ছিল, সিপিএমের দুর্নীতি খুঁজে বের করা। অথচ এখন যাঁরা হাতে হাতে টাকা নিয়ে ধরা পড়েন, তাঁরাই আজ মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে থাকেন!’
তিনি আরও বলেন, ‘মাথা ঠিক না থাকলেই মানুষ এ ভাবে উল্টোপাল্টা বলে থাকেন।’ তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয়মন্ত্রী থাকার সময়েও তিনি কোনও সিপিএম নেতার সাদা ধুতিতে কালির ছিটে দিতে পারেননি। সেখানেই না থেমে তিনি তোপ দেগে বলেন, ‘২০২১ সালের পর দলটারই কোনও অস্তিত্ব থাকবে কিনা সন্দেহ আছে।’ কংগ্রেস নেতা তথা বাংলার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী এ–সব কথা বলে নিজেকেই হাসির খোরাক করছেন। তিনি আগে বলেছিলেন, কাটমানি নিবি, ৭৫ শতাংশ পার্টিকে দিবি, আর ২৫ শতাংশ নিজের কাছে রাখবি। পরে মানুষের বিক্ষোভ টের পেয়ে বললেন, সব কাটমানি ফেরত দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী কি আজ বলতে পারবেন, কত টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে? কতজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে? কতজন গ্রেফতার হয়েছে?’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘বাংলায় কোথায় দুর্নীতি নেই? বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি হতে হবে, কলেজে ভর্তি হতে হবে, প্রাইমারি টেট থেকে সবকিছু, —কোথায় দুর্নীতি নেই? কোনও নেতা বাদ নেই। এর প্রতিবাদ করছি বলেই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করে দেওয়া হচ্ছে। তবু আমাদের রোখা যাবে না। ওদের দুর্নীতি ধরিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এখন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, রাজ্যে মাত্র ১০ শতাংশ দুর্নীতি হচ্ছে? কী করে বলছেন এ–সব কথা?’ তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘সাধারণ মানুষের টাকা যদি কেউ মেরে দেয়, লুঠ করে, স্বজনপোষণ করে, পার্টির লোককে খাওয়ায়, তা হলে তার প্রতিরোধ বিজেপি করবেই।’