ওয়েব ডেস্ক: দিগন্তবিস্তৃত মাঠজুড়ে হাসছে হাজার হাজার সূর্যমুখী। মেঘনা নদীর মৃদু হাওয়ায় দোল খাওয়া এই হলুদের আভা যেন এক অপার মুগ্ধতার হাতছানি। নরসিংদীর নাগরিয়াকান্দি এলাকায় গেলে মনে হবে, কোনো নিপুণ শিল্পী মাটির ওপর যত্নে বিছিয়ে রেখেছেন হলুদের গালিচা। যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ভুলে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে মানুষ এখন ছুটে চলছেন মেঘনাতীরের এই ‘সূর্যমুখীর হলুদ রাজ্যে’।
নরসিংদী সদরের নাগরিয়াকান্দি এলাকায় ২০ বিঘা জমির ওপর এই নান্দনিক বাগানটি গড়ে তুলেছেন তিন উদ্যোক্তা– তৌহিদুল ইসলাম মাসুম, মাহবুবুর রহমান ও টিটু মিয়া। বারি-২, বারি-৩ ও হাইসান জাতের সূর্যমুখীর এই রাজ্যে শুধু ফুল নয়, আছে বিনোদনের পূর্ণাঙ্গ আয়োজন। টিকিটে মিলছে সেলফি বুথ, ওয়াচ টাওয়ার আর ছাতা নগরীর সৌন্দর্য।
শিবপুর থেকে আসা সিনথিয়া ইসলাম সুমাইয়া বলেন, পরীক্ষার কারণে অনেক দিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। মেঘনা নদী আর সূর্যমুখী বাগানের অপরূপ দৃশ্য একসঙ্গে উপভোগ করতে পেরে খুব ভালো লেগেছে।’
কলেজছাত্র জুনায়েদ আহমেদের কণ্ঠেও একই সুর। তার মতে, শহরের যান্ত্রিকতায় প্রকৃতির এমন রূপ সচরাচর মেলে না। বাগানটিকে যেভাবে সাজানো হয়েছে, তাতে সময়টা বেশ ভালো কাটে।
রায়পুরার মিতু আক্তার এসেছেন ফেসবুকে বান্ধবীদের ছবি দেখে। তিনি বলেন, ‘ছবিতে যা দেখেছি, বাস্তবে বাগান তার চেয়েও বেশি সুন্দর। বাগানের পাশে পিটুনি ফুলের সমারোহ আর ছাতা নগরী ভিনদেশি আবহ সৃষ্টি করেছে।’
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কণ্ঠে কিছুটা আক্ষেপও ঝরল। ফাতেমা বেগম নামের এক দর্শনার্থী জানান, নরসিংদী শহরে সপরিবার সময় কাটানোর মতো জায়গার বড্ড অভাব। ঘরে বসে থাকতে থাকতে শিশুরা বিরক্ত হয়ে যায়, তাই একটু আনন্দ দিতেই তাদের এখানে নিয়ে আসা।
প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীর ভিড় আর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে বাগানের অন্যতম উদ্যোক্তা তৌহিদুল ইসলাম মাসুম জানান, মূলত তেল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বাগানটি করা হলেও দর্শনার্থীদের ব্যাপক আগ্রহের কারণে একে একটি বিনোদনকেন্দ্রে রূপ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষ এখানে ঘোরার পাশাপাশি বিয়ের ফটোশুট ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। ভবিষ্যতে এখানে থাকার ব্যবস্থাও করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ আজিজল হক এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি জানান, চলতি বছর জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রায় ১২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও বীজ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। তেলের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় এবং পর্যটন সম্ভাবনা থাকায় চাষিরা এখন সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
মেঘনার তীরের এই বাগানটি কেবল কৃষিতেই নয়, বরং পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে নরসিংদীতে।