বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:বুধবার রাজ্যের ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করার কথা ছিল পশ্চিমবাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের। কিন্তু বৈঠকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়া আর কেউই উপস্থিত ছিলেন না। ফলে বৈঠক আর করেননি রাজ্যপাল।
ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের সামনে রাজ্যের প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, ‘রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন রাজনৈতিক খাঁচাবন্দি হয়ে পড়েছে। এর ফল ভয়াবহ হতে বাধ্য। এমন রীতি আত্মঘাতী ছাড়া আর কিছু নয়। রাজ্য যদি ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার উদ্বেগ এ ভাবে খারিজ করে দিতে থাকে, তা হলে ভুলই করবে। ’ পাশাপাশি যে সব উপাচার্য রাজ্যপালের বৈঠককে উপেক্ষা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। আবার এমন দাবিও করেছেন, ‘পড়ুয়াদের প্রতি সরকারি উদাসীনতা দেখে তাদের মন বিষাদে ভরে গিয়েছে। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়, এমন সরকার প্রতিদিনই ছাত্রছাত্রীদের মন অশান্ত করে তুলেছে।’
তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যে সমস্যার মধ্যে পড়েছে, তা বুঝতেই এই বৈঠক ডেকেছিলাম। কিন্তু রাজ্য নখ–দাঁত বের করে তা বানচাল করতে নেমে পড়েছিল। যদি সরকার বারবার সবকিছু এ ভাবে অস্বীকার করতে থাকে, তা হলে কী হবে? কে এই দায়িত্ব নেবে? কাউকে তো এই কাজ করতে দেখছি না! রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখলেও ঠিকমতো উত্তর দেয় না।’ রাজ্যপালের মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরই মুখ খোলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘রাজ্যপাল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলছেন। উপাচার্যরা বিধি অনুযায়ী ভার্চুয়াল বৈঠকে থাকেননি। এখন রাজ্যপাল মায়াকান্না কাঁদছেন।’ তিনি বলেছেন, ‘পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি চিন্তিত। আমি জানতে চাই, পড়ুয়াদের কল্যাণে তিনি কী করেছেন?’’
এর পর বিকেলেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমিও কিন্তু কম দিন রাজনীতি করছি না! অসহ্য ভাষা দংশন করা হচ্ছে।’ তিনি রীতিমতো আক্রমণাত্মক সুরে বলেন, ‘আমি অভিযোগ করছি না। তবে আমি তাঁর চিঠির উত্তর দিই না বলে যে সব অভিযোগ করছেন, তা ঠিক নয়। তিনি আমাকে মেসেজ করেছিলেন। কালই তাঁর সঙ্গে ফোনে আমার চারবার কথা হয়েছে।’ মমতা এদিন আরও বলেন, ‘রাজ্যপালের মর্যাদা কী, তা আমরা জানি। আশা করি, রাজ্যপালও নিশ্চয় নির্বাচিত সরকারের মর্যাদা কী হওয়া উচিত, তা জানেন।’ তার পরই তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন কোভিড সামলাব, নাকি এ–সবই করব? আমরা কি চাকর–বাকর?’
উপাচার্যদের সঙ্গে রাজ্যপালের না হওয়া বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি নতুন আইনের কথা বলেন। সেই আইন অনুযায়ী উপাচার্যদের হাতে রাজ্য যে সব অধিকার দিয়েছে, তা–পড়ে শোনান। বলেন, ‘এ ব্যাপারে শিক্ষা দফতরের পরামর্শ নিতে পারতেন রাজ্যপাল।’ তবে রাজ্যপালের বৈঠকে উপাচার্যদের উপস্থিত না থাকা নিয়ে রাজ্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা। তাঁরা পরিষ্কার জানিয়েছেন, উপাচার্যরা যা করেছেন, তাতে রাজ্যপালকে শুধু অসম্মানই করা হয়নি, সাংবিধানিক ব্যবস্থার প্রতিও অসম্মান করা হয়েছে। এতে রাজ্যের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়েছে।
কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘রাজ্যপালের ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিলে উপাচার্যদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ত না। কিন্তু, এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে যে সঙ্ঘাত তৈরি হয়েছে, তাতে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থারই ক্ষতি হবে।’ সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু রাজ্যপাল তো আচার্য। তা হলে উপাচার্যরা তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন না কেন? এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।’