দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের চাকাই গ্রামের আব্দুল হাকিম ভেপু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করার ফলে পুকুরের উপরিভাগের কৃষি জমি, বসতবাড়ী ও কবরস্থান ভেঙে পড়ার কারণে একই এলাকার কৃষি জমির মালিক মো. খাইরুল ইসলাম, বসতবাড়ীর মালিক সহিদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ামিন হোসেন সদ্য যোগদানকৃত এসিল্যান্ড ডালিম সরকারকে বিষয়টি দেখতে বলেন। এসিল্যান্ড ডালিম সরকার গত ১১ জুন সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর খনন করার ফলে পার্শ্ববর্তী কৃষি জমি, বসতবাড়ী ও কবরস্থানের ক্ষতি পর্যালোচনা করে স্থানীয় ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনের উপস্থিতিতে এসিল্যান্ড ডালিম সরকার পুকুরের মালিক আব্দুল হাকিমকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
পরবর্তীতে আব্দুল হাকিম পুকুরের ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করার কথা জানান। কিন্তু পুকুরের ভাঙা অংশ মেরামত না করায় বৃষ্টির পানিতে বেশি করে ভেঙে যেতে থাকে। ফলে অভিযোগকারীরা পুনরায় সহকারি কমিশনার ডালিম সরকারকে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতেই গত ১৮ জুলাই এসিল্যান্ড আবারও সেখানে যান। এই ঘটনায় পুনরায় আইন অমান্য করার দায়ে বীরগঞ্জের ইউএনও, এসিল্যান্ড, চেয়ারম্যান ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে পুকুরের মালিক আব্দুল হাকিমকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা জরিমান করেন। সেই সাথে আব্দুল হাকিম অঙ্গীকারনামায় লিখিতভাবে জানান, আমার পুকুর পাড়ের যে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর ও কবরস্থানের ক্ষতি হয়েছে তা আমি আরসিসি পিলার দিয়ে ৩ দিনের মধ্যে গাইড ওয়াল নির্মাণ করে দিব যাতে বসতবাড়ীঘর ও কবরস্থান ধসে না পড়ে।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই উল্টো গত ২১ জুলাই বীরগঞ্জের ইউএনও-এসিল্যন্ডসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভ্রাম্যমান আদালত ও অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের দায়ে দিনাজপুর জজকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন আব্দুল হাকিম।
বিষয়টি নিয়ে গত ২২ জুলাই পুকুরের মালিক আব্দুল হাকিম একটি হাতে লেখা সংবাদ সম্মেলনের কপি বীরগঞ্জের তথাকথিত দুজন সাংবাদিককে দেন। ওই তথাকথিত দুই সাংবাদিক বিষয়ট সামাজিক মাধ্যমে ছাড়ে। হাতে লেখা সেই সংবাদ সম্মেলনের কপিতে পুকুরের মালিক আব্দুল হাকিম অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ১১ জুন আমার ছেলেকে তার অফিসে নিয়ে গিয়ে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ৫ হাজার টাকার রশিদ প্রদান করেন। একইভাবে গত ১৮ তারিখে অফিসে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ৫০ হাজার টাকার রশিদ প্রদান করেন।’
অথচ এই আব্দুল হাকিমের কথাতেই দুরকম চিত্র ফুটে উঠেছে! তার বাড়িতে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরার সামনে বলেন, ‘আমার বাড়িতেই এসিল্যান্ড ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমি আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার এবং আরেক ভাইয়ের কাছ থেকে ১ লাখ এবং আমার জমানো টাকা দিয়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। তবে তার বড় ভাই কাইয়ুম টাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে প্রথমে জানিয়েছেন। আব্দুল হাকিমের স্ত্রীও প্রথম দিকে টাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। কিন্তু অভিযোগে টাকা নেওয়ার কথা লিখেছেন অফিসে এবং মুখে বলছেন টাকা নিয়েছে বাড়িতে!
এ বিষয়ে সুজালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মহেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আব্দুল হাকিম একজন জমির দালাল। যেদিন উপজেলায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় সেদিন আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। আমরা মিমাংসা করার জন্য এবং এর পূর্বেও তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল এজন্য পরে আমি নিজেই দরখাস্ত দিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার ব্যবস্থা করেছি। এখন হাকিম যেগুলো বলছে সেগুলো সবই মিথ্যা কথা। তাকে এগুলো কেউ করাচ্ছেন বলেও চেয়ারম্যান জানান।
বীরগঞ্জের এসিল্যান্ড ডালিম সরকার বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় মাত্র কয়েকদিন হলো এসেছি। আমার বিরুদ্ধে যে ৫ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ আব্দুল হাকিম করেছেন এটা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। কারণ, যেদিন তাকে ৫০ হাজার টাকা ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হয়েছিল সেদিন স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আর আমরা হাকিম সাহেবের বাড়ির ভেতরও কেউ প্রবেশ করিনি। আমরা সবাই বাড়ির বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। হাকিম সাহেব কেন এসব অভিযোগ করছেন বিষয়টা বলা মুশকিল।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তিনি বর্তমানে দুজন ভুঁইফোড় সাংবাদিকের সাথে হাত মিলিয়ে এসব করছেন। আমরা প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।’