রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাঙামাটির বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকট হওয়ায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে বিপর্যস্ত ও ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা অব্যাহত থেকে নানা অনিয়ম নিত-্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হওয়ায় স্থানীয় সচেতন মহলে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ।
জানাগেছে, বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালে সরকার জাতীয়করণ করলেও লেখাপড়ার কোন উন্নতি না থাকায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের অন্য স্থানে নিয়ে গিয়ে লেখাপড়া করানো হচ্ছে। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.নুরুল ইসলাম সম্প্রতি বিদ্যালয়ের মূল ভবনের উত্তর ও পুরুষ ছাএাবাসের দক্ষিণে বিদ্যালয়ের জায়গা থেকে সেগুনসহ অন্যান্য গাছ কাটেন।
অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, এসব গাছ কাটতে তিনি সরকারি পর্যায়ে যথাযথ স্ব স্ব কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক কর্তনকৃত গাছ স্থানীয়ভাবে সরকারি অনুমোদন ব্যতীত বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এব্যাপারে মুঠোফোনে প্রধান শিক্ষকের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,অনুমতি নিয়ে নেবো, বিলাছড়ি ইউএনওকে মোখিকভাবে বলেছি।
রাঙামাটি সার্কেলের বনসংরক্ষক সুবেদার ইসলাম প্রতিবেদককে জানান,বনবিভাগের অনুমতি ব্যতীত কোন গাছ কাটতে পারবে না । আগে বনবিভাগকে জানাইতে হবে পরে অনুমতি বিষয় আসছে।এদিকে বিদ্যালয়টিতে নানা অনিয়ম অনেক ্আগে থেকেই দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে এখন চরমে পৌছায় স্থানীয় শিক্ষিত সচেতন মহল বেশ উদ্বিগ্ন। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বছরের প্রথমে বিবিধ ফিসহ পরে টিউশন ফি, পরীক্ষার ফি এসব উত্তোলনের পর প্রধান শিক্ষক আংশিক বিদ্যালয় ফান্ডে জমা করে অবশিষ্ট নিজ হাতে রেখে দেন। তাছাড়াও শিক্ষা বোর্ডের সনদ,একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রশংসা পত্রসহ এসবের প্রতিটির বিপরীতে তিনশত টাকা হারে আদায় করলেও সমুদয় টাকা বিদ্যালয় তহবিলে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিজের কাছে গচ্ছিত রেখে ভোগ করেন।
অপরদিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনে তিনশত টাকার অধিক হারে প্রতি শিক্ষার্থী থেকে আদায় করেন। যা শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফি ও অন্যান্য স্কুলের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু বাড়তি টাকা আদায়ের পর বিদ্যালয় ফান্ডে জমা না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতায় আবাসিক ছাত্র-ছাত্রী খাওয়া-দাওয়ার বিলেও চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, চলতি বছরের মার্চ মাসের কয়েক সপ্তাহ পর আবাসিক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে ছিল না। পরে করোনা মহামারী কালীন দুর্যোগে সকলে বাড়ি চলে যায়। তা সত্ত্বেও বিগত জুন মাসে জানুয়ারী মাস থেকে ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখিয়ে রাঙামাটি জেলা পরিষদ থেকে ভুয়া বিল করে সরকারি অর্থ উত্তোলনের ব্যবস্থা করেন প্রধান শিক্ষক।
সরকার বিভিন্ন খাতে বিদ্যালয়টিতে বরাদ্দ দিলেও উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের মাধ্যমে বিল পাশ করে প্রধান শিক্ষক কাজ বাস্তবায়ন না করে বিলের উত্তোালিত অর্থ নিজ হাতে রেখে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফলে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী বিল ভাউচার ও স্টক রেজিস্টারের সাথে বাস্তবে সাদৃশ্য না থাকায় প্রধান শিক্ষকের কার্যক্রম সম্পূর্ণ রহস্যজনক। বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিরাজমান নানা অনিয়ম অবিলম্বে রোধ করে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান হিসাব রক্ষক মো.খুরশেদ আলম চৌধুরী প্রতিবেদককে জানান, জুলাই ২০১৯ ইং হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত ছাত্রাবাসের জন্য ৯ লক্ষ টাকা উক্তোলন করেছে বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.নুরুল ইসলাম।
ক্যাপশন: সরকারি অনুমোদন ব্যতীত বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক গাছ কাটার একাংশ।
রিপোর্ট:চৌধুরী হারুনুর রশীদ,রাঙ্গামাটি।