বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ তুললেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৫ পাতার চিঠির জবাবে দ্বিতীয় দফায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ১৪ পাতার দীর্ঘ চিঠি দিলেন শুক্রবার। আর সেই চিঠিতেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শানালেন এমনই বেনজির আক্রমণ। স্বভাবতই রাজভবন এবং নবান্ন দ্বৈরথ ভয়ঙ্কর মাত্রা পেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
ভারতে লকডাউন পর্বে পশ্চিমবাংলায় রাজভবন–নবান্নের দ্বন্দ্ব চলছিলই। নবান্ন তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাজ নিয়ে প্রায়ই নানা প্রশ্ন তুলে কখনও টুইট করছিলেন, কখনও বা ভিডিও বার্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই বিতর্কে শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৫ পাতার দীর্ঘ চিঠি লিখে রাজ্যপালকে নজিরবিহীন আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ধনকড় যেমন মনোনীত রাজ্যপাল, তেমনই তিনি নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। মমতার প্রশ্ন করেছিলেন, “আপনি নিজেই বিচার করুন আপনি সংবিধানসম্মত কাজ করছেন কিনা।’ এমনকী, রাজ্যপালকে আম্বেদকরের নির্দেশ মেনে চলার পরামর্শও দেন।
চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টুইট করে রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, তিনি চিঠি পেয়েছেন। রাতেই জবাব দেবেন। তবে চিঠিতে তাঁর সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা তথ্যগত ভাবে ভুল এবং সাংবিধানিক ভাবে দুর্বল বলে তিনি জানান। কথা মতো রাতে তিনিও ৫ পাতার চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, ‘কোনও সাংবিধানিক পদাধিকারীকে নিজে আইন হয়ে ওঠার অধিকার আমাদের দেশের সংবিধান দেয়নি। জমিদারির মতো রাজ্য চালানো যায় না। সংবিধানের সমস্ত শর্ত মেনেই চালাতে হয়।’ সেই চিঠিতে তিনি জানিয়ে দেন, শুক্রবার তিনি বিস্তারিত জবাব দেবেন।
সেই অনুযায়ী এদিন তিনি ১৪ পাতার কড়া চিঠি পাঠান। এই দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেন। জানান, সেই ব্যর্থতা ঢাকতে এবং তা থেকে সকলের দৃষ্টি ঘোরাতেই মুখ্যমন্ত্রী নতুন কৌশল নিয়েছেন। তাঁর লেখা দীর্ঘ চিঠিতে ৩৭টি পয়েন্ট রয়েছে। সেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, ‘আপনার সংখ্যালঘু তোষণ এতটাই প্রকাশ্য যে, নিজাউদ্দিনের ঘটনা নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করা হলে আপনি বলেছেন এই প্রশ্ন নাকি সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন। যা একেবারেই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, বিষয়টির সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা জড়িত।’
তিনি লিখেছেন, ‘আপনার তোষণনীতি দৃষ্টিকটু। কিন্তু আপনি আইনের ঊর্ধ্বে নন। সুপ্রিম কোর্টও তাই বলে। আপনি সংবিধান অবমাননা করেছেন।’ চিঠিতে সিএএ প্রসঙ্গে তুলে তিনি লিখেছেন, ‘এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। আপনি তাঁর পথ অনুসরণ করতে পারতেন। তাঁর মতো মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু আপনি তা করছেন না। আমার অনুরোধ, আপনি দেওয়াল লিখন পড়ুন। সংবিধান মেনে চলুন।’
তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে এ কথাও লিখেছেন, ‘এই মুহূর্তে রাজ্যের সমস্ত বিরোধী দলই সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। আপনারও উচিত এই সময় রাজনীতি বন্ধ রাখা।’ তিনি কড়া ভাষায় বলেছেন, ‘আপনি তথ্য গোপন করছেন। আর নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে অজুহাত দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় দলকে এ রাজ্যে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না। আপনি চিঠিতে আম্বেদকরের কথা বলছেন। অথচ নিজেই সংবিধানকে অবজ্ঞা করছেন।’
মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে তীব্র শ্লেষের সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘মাইক নিয়ে, ঝাঁটা হাতে নাটক করা মুখ্যমন্ত্রীকে মানায় না। আপনি এই ধরনের নাটক করা বন্ধ করুন। কাজ করুন।’ রাজ্যের মন্ত্রী এবং আমলারাও যে সাংবিধানিক রীতি না মেনে তাঁকে অগ্রাহ্য করে যাচ্ছেন, সে কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। যদিও তিনি চিঠিতে এ কথাও লিখেছেন, রাজভবনে তাঁর একজন বন্ধু রয়েছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ দিয়ে কাজ করতে চান।
ওই চিঠি নবান্নে পৌঁছনোর পর তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র তীব্র আক্রমণ শানান রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অনুরোধ করে তিনি লেখেন, ‘একটা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছি আমরা। রাজভবনকে খুশি করার মতো সময় এখন আমাদের হাতে নেই। আপনারা বরং আমাদের একটা উপকার করুন। এই ভদ্রলোককে দিল্লি নিয়ে লকডাউনে রাখুন।’