দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ ধানের ক্ষেতে পেকে গেছে সোনালী ধান। ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন যশোরের কৃষাণ-কৃষাণী।
ধানের মৌসুম মানেই কৃষকের মুখে হাসি কিন্তু এখানকার কৃষকদের কপালে এখন চিন্তার ভাজ। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কৃষকরা সবাই ঘরমুখো। ফসল ঘরে তুলতে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায় যে, সময়মতো সোনালী ফসল ঘরে তুলতে না পারলে এসব ধান জমিতেই পেকে পড়ে যাবে বলে জানালেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ধানের ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন পরই এখানে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হবে। করোনার ভয়ে ৫শ টাকা দৈনিক শ্রমমূল্যেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফসল ভালো হওয়াতে কৃষকরা খুশি। সে খুশি যেন আর স্থায়ী হতে পারছে না।
ধান কাটার শ্রমিক সংকটে পড়েছেন উপজেলায় শার্শা, নাভারন, বাগআঁচড়া, বেনাপোলসহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক।
কৃষকরা জানান, ধান পাকার মৌসুমে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটতে যে সকল শ্রমিক আসার কথা করোনার প্রভাবে সেসব শ্রমিক আর এখানে আসছেনা। ধান পাকলেও তারা না আসাতে বর্তমানে ধান কাটা শ্রমিক সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের কৃষক তাহাজ্জত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষকদের ফসল হচ্ছে এই ধান। এই ধানে খাবার থেকে শুরু করে পরিবারের সব চাহিদা পূরণ হয়। এবছর ২০ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ধান পাকছে কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। একদিকে করোনার ভয় অন্যদিকে শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। যার জন্য আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি আসলে এই ধান ঘরে তুলতে পারবো কিনা।’
ধান কাটার শ্রমিক সংকট বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, ‘এবছর ধানের বাম্পার ফলনের আশাবাদী আমরা। তবে করোনার প্রভাবে তা কিছুটা ব্যাহত হতে পারে। তবে আমরা নির্দেশনা পেয়েছি বাইরে থেকে কোন শ্রমিক আপাতত আনা যাবেনা। এজন্য ধান কাটার জন্য আমরা ৪টা হার্ভেস্টার মেশিন ভাড়া করেছি। এরই মধ্যে দুটি এসে পৌঁছেছে। মাঠে তিনটি ধান কাটা শুরু করেছে। বাকী দুটি দু একদিনের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। অযথা বাইরে থেকে কোন শ্রমিক আনার প্রয়োজন নেই এলাকার শ্রমিক দিয়েই আপনারা ধান কাটুন।
শার্শা উপজেলা সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুন কুমার বালা বলেন, উপজেলায় এবার ২৩ হাজার ৭শত ২০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। অন্যবারের তুলনায় এবার ধানের ফলন বেশি হয়েছে। আশা করি এবার রেকর্ড পরিমান ধান পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর জেলা প্রশাসক মোঃ শফিউল আরিফ যশোর জেলার কৃষকদের একটা নির্দেশনা প্রদান করেন। আর তা হল
‘ধানকাটা মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে যশোর জেলার সকল কৃষক ভাইদের প্রতি আহবান, করোনা দূর্যোগের এই কঠিন সময়ে আপনারা যথাসম্ভব নিজ এলাকার কর্মহীন মানুষকে মাঠের কাজে সংযুক্ত করুন। বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিক ও কর্মী সকলের প্রতি আহবান, আপনারা কর্মহীন অসহায়ত্বে না ভুগে, হতাশ না হয়ে ধানকাটার কাজে মাঠে যোগ দিন। একই সাথে সকলের প্রতি অনুরোধ, স্বাস্থ্য বিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। যশোর জেলায় প্রত্যেকের একান্ত প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত করোনার প্রাদুর্ভাব মহামারী আকার ধারণ করেনি। আসুন, আমরা আমাদের সামগ্রিক প্রচেষ্টায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোপরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ ধারা অব্যাহত রাখি, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করি।’
দৈনিক প্রত্যয় /সারাদেশ/ জাহিরুল মিলন