প্রত্যয় ডেস্ক, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ বাণিজ্যিকভাবে ঝিঙ্গার আবাদে লতাপাতা যাতে মাটিতে গড়াগড়ি না খায় সেজন্য এতদিন বাঁশের কঞ্চি বা বাঁশের তৈরী খুটি ব্যবহার করা হতো। এতে ঝিঙ্গা আবাদের খরচ বেড়ে যেত। খরচ কমিয়ে আনতে এবার খুটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ভূট্টার ডাটা। সেইসাথে স্বল্প খরচে এক জমিতেই দুই ফসলের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা।
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের দুই শতাধিক কৃষক অভিনব এ পদ্ধতি ব্যবহার করে খরচ কমিয়ে ফেলেছেন।
লেহেম্বা ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামের কয়েকজন ঝিঙ্গা চাষী জানান, ভুট্টার ক্ষেতে এক দেড় মাসের মধ্যে ভুট্টা গাছের পাশে ঝিঙ্গার বীজ রোপন করা হয়।ভূটার সেচ আর পরিচর্যায় ভূট্টার পাশাপাশি ঝিঙ্গার গাছও বড় হতে থাকে। ভুট্টার মোচা গাছ থেকে ভেঙ্গে নেওয়ার পর গাছ পরিত্যক্ত অবস্থায় থেকে যায় জমিতে।পরে ভুট্টার গাছ ঝিঙ্গার খুটি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এজন্য অতিরিক্ত সার বা সেচ কোনটাই লাগেনা। শুধু মাত্র পোকামাকড় দমনে স্প্রে করা হয় কীটনাশক। কিছুদিনের মাথায় ঝিঙ্গাও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা।
কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমি থেকে প্রতিদিন এক থেকে দেড়মণ ঝিঙ্গা তুলে বাজারজাত করে লাভবান হচ্ছেন তারা। ভুট্টা ফসল উঠার পর তার পরিত্যক্ত ডাটাকে খুটি হিসাবে ব্যবহার করে ঝিঙ্গার খুটির জন্য বাঁশ বা কঞ্চি স্থাপনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বা মজুর কোনটাই লাগছে না। এভাবে গত তিন বছর ধরে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে চাষাবাদ করে অনেক টাকা ব্যয় করা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছেন।
শামসুল হক নামে একজন কৃষক জানান, ভুট্টা ও ঝিঙ্গা এক সাথে আবাদ করার ফলে এক খরচেই দুটি আবাদ হয়ে পড়ছে। ঝিঙ্গার জন্য আলাদা কোন খরচ বহন করতে হচ্ছে না। তাই তারা মনে করে এটি একটি লাভজনক চাষাবাদ। এছাড়াও এটি একটি বিষমুক্ত সবজি।
কৃষক আক্তার জানান, ভুট্টা তুলে নেওয়ার পরে এবং আলু রোপনের জমি প্রস্তুত করার আগ মুর্হুত পর্যন্ত জমি থেকে ঝিঙ্গা তুলে বাজারে বিক্রি করা যায়। সামসুল জানান, আমরা কৃষি অফিসের এমন উন্নত প্রযুক্তি অবলম্বন করায়, আমাদের এলাকায় সবজির চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে আশ পাশের গ্রামসহ উপজেলা জেলা শহরের পাইকারদের কাছে ১০ টাকা কেজি দরে ঝিঙ্গা বিক্রি করছি। এতে একদিকে যেমন আমাদের সবজির চাহিদা মিটছে অন্যদিকে আমরাও এক জমি থেকে দুটি ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছি।
এদিকে এ পদ্ধতিকে সমস্ত উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষক, প্রভাষক সাংবাদিক এনজিও কর্মি ও জনপ্রতিনিধির সম্বন্বয়ে ২৫ জনের একটি দলকে নিয়ে বিরাশি গ্রামে ঝিঙ্গা চাষের অভিনব পন্থার সরেজমিন পরিদর্শন করে আবাদের পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।
রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানান, ভুট্টা ক্ষেতে ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে লেহেম্বা ইউনিয়নের বিরাশিটি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রায় ২১৫ জন কৃষক ৫০ হেক্টর জমিতে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ মণ ঝিঙ্গা তুলে বাজারজাত করে আসছে।
রিপোর্টঃ বদরুল ইসলাম বিপ্লব