প্রত্যয় নিউজডেস্ক: দেশজুড়ে যখন নারী নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে তখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুললেন তারই দুই ভাগ্নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই শিক্ষকের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে অপরাজিতা (ছদ্মনাম) এক নারী অভিযোগ তুলেছেন খুবির বিবিএ ডিসিপ্লিনের শিক্ষক মীর সোহরাব হোসেন সৌহার্দ্যর বিরুদ্ধে।
তিনি ‘আমি আমার ঘর থেকেই প্রথম প্রতিবাদ শুরু করলাম’ শিরোনামে এই অভিযোগ উত্থাপন করেন। ওই লেখার কমেন্টেও অপর এক আত্মীয় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মন্তব্য করেন।
অপরাজিতা লিখেছেন, ‘আজ আমি সব নোংরামি এক্সপোজ করব। আর চুপ থাকা নয়। যৌন নিপীড়কের, রেপিস্টদের সমাজে বাঁচার অধিকার নেই। তাহলে আমার মান সম্মান কমবে কেন? আমি কেন লজ্জা পাব? লজ্জা পাওয়া উচিত সেই কুলাঙ্গারদের এবং সেই কুলাঙ্গারদের পরিবারের! আমার নয়, আমার পরিবারের নয়।
আমার লেখা আমার আত্মীয়দের কেউ পড়ে থাকলে, অবাক হলে বা ভাষার প্রয়োগ ঠিক না মনে হলে, আমার কিছু যায় আসে না। যারা এমন আত্মীয়দের পক্ষে সুর টানতে চায় বা মনে ধারণ করে যে প্রকাশ করলে বংশ মর্যাদা হানি হয়, তাদেরকে আমিও আত্মীয় বলে মনে করি না। এমন আত্মীয়ের প্রয়োজন নেই, যারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রেপিস্ট টাইপ লোকদের ব্যাপারে মৌন সাপোর্ট দেয়, চুপ থেকে। আপনারা রেপিস্ট টাইপ লম্পট, অপরাধীদের নিয়ে যদি গর্বিত হন তাহলে আপনার মুখে এক দলা থু থু দিলাম!
আমাদের শৈশব, কৈশোর আতংকে কেটেছে যার জন্য সে কিন্তু বাইরের কেউ নয়! সে হলো মীর সোহরাব ওরফে ‘সৌহার্দ্য’ নামের একজন কুলাঙ্গার, যে কিনা সম্পর্কে আমাদের মামা লাগে। এই শুয়োরটা কিন্তু অশিক্ষিত না। বরং এতই শিক্ষিত যে এখন খুলনা ভার্সিটির প্রফেসর! ক্যাডেটে পড়াশুনা করেছে। এখন বিয়ে করে বউ, বাচ্চা নিয়ে খুব সুখের সংসারও করে বেড়াচ্ছে। নামাজ পড়তে পড়তে এখন কপালে দাগও বসিয়ে ফেলেছে!
শুয়োরটা বাসায় এলেই আমরা সব বোন ভয়ে, আতংকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতাম। না যাওয়া পর্যন্ত খুলতে চাইতাম না। কিন্তু ঐ যে! ‘আত্মীয়’!
আমরা নাকি অসামাজিক হয়ে যাচ্ছি, মেহমান এলে বেয়াদবের মতো দরজা লাগিয়ে বসে থাকি। এই দোষে আমাদের শেষমেশ দেখা করতে বাধ্য করা হত। আদরের ওছিলায় আমাদের ছোট্ট শরীরের সব জায়গায় ঐ সৌহার্দ্য নামক জানোয়ারটার নোংরা হাত ঘুরে বেড়াত। আম্মু মেহমানদারির জন্য রান্নাঘরে বা চোখের বাইরে গেলেই শয়তানটা ড্রেসের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে নোংরামি করতেও এক সেকেন্ড দেরি করত না!
না, রেপ হইনি। কারণ, বাসা ফাঁকা থাকত না। যদি ফাঁকা থাকত তাহলে নিশ্চিতভাবেই রেপড হয়ে যেতাম! আমি কেন, আমার অন্যান্য সমবয়সী মেয়ে কাজিনদের সঙ্গে একই কাজ করত দুই একজন বাদে (যারা বয়সে বড় ছিল ও প্রতিবাদ করার মতো সাহসী ছিল), তাও আমার চোখের সামনেই! এত কুৎসিত সেই দৃশ্য! ছিঃ।’
এই লেখার মন্তব্য কলামে অনন্যা (ছদ্মনাম) লিখেছেন, ‘সেই আতংকের কথা কী আর বলব। এত ছোট বয়সে হ্যারাসড হয়েছি যে হ্যারাসমেন্ট কী সেটাই বুঝতে পারতাম না। খালি মনে হত যে উনি তো মামা। হয়তো উনি আমাকে স্নেহ করে কিন্তু উনার কাজ আমার কাছে এত জঘন্য কেন লাগে। হয়তো এটা আমারই দোষ।
অনেক বড় হয়ে যখন ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি ততদিনে কাউকে বলার রুচি মানসিকতা কিছুই আর ছিল না। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মুখ খোলার জন্য।’
অপর একজন লিখেছেন, ‘দোস্ত, তোর মনে আছে কিনা জানি না এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক আগে তুই আমার সঙ্গে শেয়ার করেছিলি। আমিও আমার কিছু কথা তোকে বলেছিলাম। তবে তুই যে প্রতিবাদ প্রতিবাদ ঘর থেকে শুরু করলি, তার জন্য স্যালুট তোকে। এই সমস্ত কুলাঙ্গারদের পরিবার থেকেই বয়কট করা উচিত, যাতে করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কোথাও এদের জায়গা না হয়।’
অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক মীর সোহরাব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী ফোন রিসিভ করে বলেন, তার স্বামী (শিক্ষক মীর সোহরাব হোসেন) বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।
তবে তিনি ভাগ্নিদের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এটা তার বিষয়। আমার স্বামী খুব ভালো একজন মানুষ। যে এসব আজেবাজে অভিযোগ করেছে সে আমাদের আত্মীয়। কিন্তু কী করে সে এত নোংরা অভিযোগ করল তা আমার বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের পরিচালক মোসা. হোসনেআরা বলেন, একজনের মাধ্যমে লিংক পেয়ে আমি বিষয়টি দেখেছি। কিন্তু আমাদের কাজ হলো খুবির অভ্যন্তরে যদি কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে তা প্রতিরোধ করা। কিন্তু এটা বাইরের বিষয়। এই বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ করলে তখন বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে।