প্রত্যয় ডেস্ক, রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ রাঙামাটির লংগদতে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মামলায় শিক্ষক জেল হাজতে প্রেরণ। ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম স্বেচ্ছায় গোপনে রাঙামাটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বেলাল সাহেবের আমলী আদালতে আত্বসর্ম্পন করতে হাজির হয়। আদালত তার জামিন না মজ্ঞুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
লংগদু থানার ইনচার্জ সৈয়দ মোহাম্মদ নূর বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ এনে রবিবার রাতে ভিক্টিমের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ইতিমধ্যে ভুক্তভোগির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার আগাম আদালতে আত্মসমর্পন করতে গেলে আদালত জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
রবিবার রাতে এমন অভিযোগে রাঙামাটি লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ি আরএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমকে একমাত্র আসামি করে লংগদু থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগি শিক্ষার্থির মা। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশি নিরাপত্তায় ভুক্তভোগি ওই শিক্ষার্থির ‘ডাক্তারি পরীক্ষা’ সম্পন্ন হয়েছে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, ছাগল খুুঁজতে গিয়ে নিজের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন রাঙামাটি সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থি। লেবু দেওয়ার কথা বলে ছাত্রাবাসের একটি নির্জন কক্ষে ডেকে নিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে। বিষয়টি কাউকে না জানাতে প্রাণনাশেরও হুমিক দেওয়া হয়।
‘ধর্ষণের অভিযোগটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করা অভিযুক্ত আব্দুর রহিম শিক্ষকতা ছাড়াও দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার লংগদু উপজেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। চার সন্তানের জনক আব্দুর রহিমের ‘প্রেমঘটিত বিয়ে’র দুই স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্ত্রী তার মাদরাসারই শিক্ষার্থি ছিলেন।
ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু জানাজানি হলে প্রাণনাশের হুমকি থাকায়’ এক সপ্তাহ পরে রবিবার রাতে বিষয়টি থানা পুলিশে গড়ায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগির মা বলেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে দশটার দিকে তার মেয়ে ছাগল খুঁজতে বিদ্যালয়ের দিকে যায়। এসময় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম লেবু দেয়ার কথা বলে বিদ্যালয়ের পেছনে ছাত্রাবাসের একটি নির্জন কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে আব্দুর রহিম কক্ষের দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেন এবং বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেন।
ভুক্তভোগি ওই শিক্ষার্থির মা জানান, গত বছর করল্যাছড়ি আরএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে তার মেয়ে রাঙামাটি সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। তিনি নিজেও ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য।
ভুক্তভোগীর ছাত্রীর বাড়ি বিদ্যালয়ের অদূরেই। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে দশটার দিকে। এরপর থেকে মেয়ের শারিরীক অসুস্থতা ও অস্বাভাবিক আচরণ দেখে ঘটনার দুইদিন পর ২৭ সেপ্টেম্বর ‘জোরপূর্বক ধর্ষণ’ করার বিষয়টি জানতে পারেন। ওইদিনই বিষয়টি স্থানীয় গ্রাম প্রধান(কার্বারি)কে ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানালেও কোন কাজ হয়নি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আটরকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। অনেকটা নিরুপায় হয়েই তিনি রবিবার রাতে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
তবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আটরকছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে এবিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসতে পারিনি। এখন মামলা হয়েছে।’
রিপোর্টঃ চৌধুরী হারুনুর রশীদ