বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : সঙ্কটেই রয়েছেন বাঙালির প্রিয় ‘ফেলুদা’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। উদ্বেগ কাটেনি। তবে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অসুস্থতার বিরুদ্ধে। বেলভিউ সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন তিনি। অল্প হলেও আগের তুলনায় তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে। তাই বাইপ্যাপ সাপোর্ট বা নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে। কোভিড–১৯ ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে তিনি সাতদিন ধরে কলকাতার বেলভিউ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সারাদিন ধরেই তিনি চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। মঙ্গলবার সকালের দিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা বাইপ্যাপ সাপোর্ট দিতে বাধ্য হন। সকালের দিকে জ্বরও ছিল তাঁর। ফারেনহাইট থার্মোমিটারে পারা উঠেছিল ১০২ ডিগ্রিতে। অ্যামোমনিয়ার লেভেল একটু বেড়ে গিয়েছিল। এদিন ফের তাঁর ইকো, ইসিজি এবং রক্ত পরীক্ষা হয়। নতুন করে এমআরআই করা হয়। পরীক্ষা করা হয় সুষুম্নারসেরও। বেলভিউ ক্লিনিকের মেডিক্যাল বুলেটিন জানিয়েছে, তিনি এখনও সঙ্কটমুক্ত নন। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন বেশ স্থিতিশীল। তাঁর কোভিড চিকিৎসা চলছে। আগে যে সব ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল, সেগুলিই দেওয়া হচ্ছে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় ইতিমধ্যে তাঁর দু’বার প্লাজমা থেরাপি হয়েছে। তবে তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। মানসিক দিক থেকেও যথেষ্ট লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে চিকিৎসকদের চিকিৎসা করতে সুবিধে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর সমস্ত অঙ্গ–প্রত্যক্ষ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সোডিয়াম, পটাসিয়ামের মাত্রায় কিছু তারতম্য রয়েছে। বুধবার তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হবে। সোমবার রাতে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সৌমিত্র। তীব্র আচ্ছন্ন ভাব গ্রাস করে তাঁকে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা। আশঙ্কার কথা শোনা যায় তখনই। ধীরে ধীরে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ছে তাঁর মস্তিষ্কে এবং ফুসফুসে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অস্বস্তিকে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না। তাই মাঝে মাঝে তাঁর শরীরে উত্তেজনার প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ঘুমও টানা হচ্ছে না। তবে এদিন দুপুরের দিকে একটু ঘুমিয়েছেনও। মাঝে মধ্যে দিতে হচ্ছে অক্সিজেনও। এদিকে, নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, অসুস্থ অভিনেতাকে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেলভিউতে যেতে পারেন।
তবে এদিন দুপুর নাগাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে একটি নেতিবাচক গুজব ছড়ায়। পশ্চিমবাংলা ও বাংলাদেশ, দুই বাংলা থেকেই বহু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকবার্তাও দেন। ফলে কলকাতার সংবাদ মাধ্যমগুলির অফিসেও অনেকে ফোন করতে শুরু করেন। তাঁরা ঘটনার সত্যতা জানতে চান। ঘটনায় অশীতিপর অভিনেতার পরিবারও যথেষ্ট বিরক্ত। একদিকে অভিনেতাকে নিয়ে মানসিক চাপ, সেই সঙ্গে এমন বিভ্রান্তিকর সংবাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা অনেকটাই ব্যথিত। এই বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য কলকাতার সংস্কৃতি জগতের তরফে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অভিনেতা–কন্যা পৌলোমী বসু জানিয়েছেন, তাঁর বাবার শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। বহু মানুষ নানা ভাবে অসুস্থ শিল্পীর আরোগ্য কামনা করায় সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেছেন পৌলোমী।
এদিকে, বাংলা সংস্কৃতি জগতের অনেকেই অভিনেতার আরোগ্য কামনায় টুইট করছেন। অভিনেতা ও পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় একটি কবিতা পোস্ট করে লেখেন, ‘সন্ধ্যা হয়ে এলো/ তবু আমাকে ভর্ৎসনা কেন করো?/ সন্ধ্যা হল তবু ভর্ৎসনা?/ অন্যায় করেছি, গেছি বনের ভিতরে,/ সেখানে চাঁদের ছায়া জলে পড়েছিল/ ঝর্নায় বিম্বিত ছিল ভূখণ্ড, আকাশ।/ …সন্ধ্যা হয়ে এলো/ সন্ধ্যা হল তবু ভর্ৎসনা? —এই কবিতা তাঁর গলায় শুনেছি রবীন্দ্র সদনে। ভালো হয়ে উঠুন।’ অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘সৌমিত্র জেঠু, ভালো হয়ে ওঠো।’ অভিনেত্রী তথা সাংসদ মিমি লিখেছেন, ‘গেট ওয়েল সুন সৌমিত্র জেঠু। ভগবান জগন্নাথের কাছে প্রার্থনা রইল।’