প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এ সময়ে সাংগঠনিকভাবে দলটি নিজেদের অবস্থান অনেক সুসংহত করলেও কিছু বিষয় নিয়ে পড়তে হয়েছে অস্বস্তিতে। বিশেষ করে দলটির পরিচয়ধারী কতিপয় লোকের অপকর্ম সরকারকেও ফেলেছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। এদের বেশির ভাগকেই ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এরপর থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলে আসছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
আসলে অনুপ্রবেশকারী কারা? অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেই কি অনুপ্রবেশকারী? নাকি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে আওয়ামী লীগের? এ বিষয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে পথচলার অতীত না থাকলেও কৌশলে দলটির বিভিন্ন সংগঠনে পদ-পদবি বাগিয়ে যারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের পেছনে ঘোরাঘুরি করে যারা এ পরিচয়ে অপকর্ম করেছেন এবং অন্য দল থেকে এসে যারা কৌশলে আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয়ে থেকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন, তারাই অনুপ্রবেশকারী। এদের একটি তালিকা হয়েছে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান হবে।
বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগে সুযোগসন্ধানীদের বিষয়ে কথা উঠলেও জি কে শামীম, শামীমা নূর পাপিয়া, ও সাহেদ করিমকাণ্ডের পর দলটির ভেতরেই অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা বলতে থাকেন, সুবিধাভোগীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের কর্মকাণ্ডে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলছে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়— সর্বস্তরে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি উঠলে এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হয় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, অনুপ্রবেশকারী তারাই যারা আওয়ামী লীগের কোনো স্তরের পদ-পদবিতে নেই। অন্য দল থেকে এসে আওয়ামী লীগ করে এবং আমাদের নেতাদের পেছনে ঘোরাঘুরি করে অপকর্মের মাধ্যমে দলকে বিতর্কিত করে।
তিনি বলেন, অভিযানের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্য দল থেকে এলেও যারা ভদ্র ইমেজের এবং যাদের দুর্নাম নেই, তারা অনুপ্রবেশকারী নন।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ সেজে যারা দলকে বিতর্কিত করছে, সরকারকে সমালোচিত করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে অনুপ্রবেশকারী হলো যারা অন্য দলের, কৌশলে আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয়ে থেকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দলকে বিতর্কিত করে। এ ধরনের একটি তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। সেই তালিকা ধরে আমরা এ অভিযান শুরু করব।
দলের অপর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে অনুপ্রবেশকারী তারাই যারা অন্য দল থেকে এসে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, সুবিধা আদায় করছে, নিজেকে রক্ষা করছে, নীতিহীন-আদর্শহীন কর্মকাণ্ড করছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের একটি শাখার এক সভাপতি বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঢোকার সুযোগ বন্ধ করতে হলে নিজের লোকের চেয়ে আওয়ামী লীগের লোককে প্রাধান্য দিতে হবে সর্বস্তরে। তবেই স্বার্থান্বেষী চক্র আওয়ামী লীগে ভিড়তে পারবে না।