প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: ম্যাচের ফলাফল বলছে, বার্সেলোনা ২ : ০ জুভেন্টাস। অথচ বার্সার জালে তিনবার বল জড়িয়েও জিততে পারেনি জুভেন্টাস! কেননা তিনটি গোলই অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। এরমধ্যে দুবার লাইন্সম্যান ফ্ল্যাগ তুলেই জানিয়ে দেন অফসাইডের কথা। তৃতীয় গোলটি বাতিল হয় ভিআরএ-এর মাধ্যমে।
এই তিনবারই বল জালে জড়ান জুভেন্টাস স্প্যানিশ স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতা। ফলে তুরিনে নিজেদের মাঠেই বার্সেলোনার বিপক্ষে ২-০ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ওল্ড লেডিদের। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোবিহীন দলটি মাঠের খেলায় ছিল ছন্নছাড়া।
বিপরীতে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ জি-তে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় তুলে নিয়েছে কাতালান জায়ান্টরা। বার্সার হয়ে গোল দুটি করেন ফ্রেঞ্চ তারকা ওসুমানে দেম্বেলে ও আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। এই জয়ের মাধ্যমে দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ জির শীর্ষে বার্সা। আর এক জয় ও পরাজয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস।
ইনজুরি ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ম্যাচের শুরুর একাদশে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে বার্সা বস রোনাল্ড কোম্যানকে। ইনজুরিতে দলে জায়গা হয়নি ব্রাজিলিয়ান তারকা ফিলিপ কৌতিনহোর। শেষ ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় বাদ পড়েছেন ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে। তার জায়গায় সুযোগ পান তরুণ ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাহো।
এছাড়া রাইট ব্যাকে সার্জিনো ডেস্টের জায়গায় খেলেছেন অভিজ্ঞ সার্জিও রবার্তো। অন্যদিকে করোনার কারণে জুভেন্টাস দলে পায়নি সেরা খেলোয়াড় রোনালদোকে। তাও বেশ শক্তিশালী একাদশ নিয়েই মাঠে নামে দুই দল।
ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত অতিথি বার্সেলোনা। ডি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া মিরালেম পিয়ানিচের বল কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন জুভেন্টাসের গোলকিপার সেজনি। ফিরতি বলে গ্রিজম্যানের জোরালো শট বারে লেগে ফিরে আসে।
সে দফায় রক্ষা পেলেও ১০ মিনিট পরই গোল করে বার্সেলোনা। ম্যাচের ১৩ মিনিটে মেসির লম্বা করে বাড়ানো পাস ডি বক্সের বাইরে পান ওসুমানে দেম্বেলে। সেখান থেকে জোরালো শটে গোল করেন এ তরুণ ফরোয়ার্ড। জালে প্রবেশ করার আগে বলটি জুভেন্টাস খেলোয়াড় কিয়েসার পায়ে লেগে কিছুটা দিক পরিবর্তন করেছিল। ফলে জুভেন্টাস গোলরক্ষক সেজনির তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায়ই ছিল না।
পরের মিনিটেই বার্সেলোনার জালে বল ঢুকান মোরাতা, তবে সেটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। এরপর ২২ মিনিটে সহজ সুযোগ মিস করেন বার্সা সুপারস্টার মেসি। অসাধারণ বিল্ডআপে গড়া আক্রমণে গ্রিজম্যানের নিখুঁত ব্যাকহিলে ডিবক্সে বল পান মেসি। সেটি গোলপোস্টের বাইরে মেরে দেন আর্জেনটাইন তারকা।
সমতা ফেরাতে মরিয়া থাকা জুভেন্টাস চেষ্টার কমতি রাখেনি। ২৯ মিনিটে মোরাতার শট ফের খুঁজে পায় বার্সেলোনার জাল। এবারও অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। ৩৩ মিনিটে আলবার একটি শটও গোলপোস্টের কিঞ্চিৎ বাইরে দিয়ে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিটে কোয়াদরাদোর পাসে বার্সার জালে আবারও বল ঢোকান মোরাতা। এবার ভিএআরে (ভিডিও এসিসট্যান্ট রেফারি) গোলটি বাতিল হয়। বলা বাহুল্য, তৃতীয়বারওঅফসাইডে ছিলেন জুভেন্টাস তারকা।
ম্যাচের ৬১ মিনিটের সময় লিড দ্বিগুণ হতে পারত বার্সার। তবে মেসির নেয়া শটটি ইঞ্চি দূরত্বে গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৭৪ মিনিটে মেসির অসাধারণ পাস থেকে গোল করতে পারেননি ফ্রেঞ্চ তারকা গ্রিজম্যান।
এরই মধ্যে ম্যাচের ৮৫ মিনিটে পিয়ানিচকে ফাউল করায় দ্বিতীয় হলুদ তথা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন জুভেন্টাস ডিফেন্ডার মেরিহ ডেমিরাল।
৯০ মিনিটে মেসির বাড়ানো বল ডিবক্সে পান বার্সার তরুণ তুর্কি আনসু ফাতি। বলটি নিয়ে সামনে এগুতেই তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন জুভেন্টাস মিডফিল্ডার বারনার্ডেস্কি। এতে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পটকিক থেকে গোল করার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেননি মেসি। এই গোলের মাধ্যমেই জুভেন্টাসের শেষ আশার প্রদীপটাও নিভে যায়।
পুরো ম্যাচেই অসাধারণ খেলেছেন মেসিরা। তবে পাওলো দিবালাসহ জুভেন্টাসের বেশকিছু খেলোয়াড় পুরো ম্যাচেই নিষ্প্রভ ছিলেন। পুরো ম্যাচে ৫৯.২ শতাংশ বল দখলে রেখেছে অতিথিরা। বিপরীতে জুভেন্টাসের দখলে ছিল ৪০.৮ শতাংশ।
গোলের উদ্দেশে মেসিরা শট নিয়েছেন ১৩টি, যার ৪টি ছিল লক্ষ্য বরাবর। অন্যদিকে ১০টি শট করলেও কোনোটিই লক্ষ্যে ছিল না জুভেন্টাসের। জুভেন্টাসের ৪ খেলোয়াড়কে হলুদ ও একজনকে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে। বিপরীতে বার্সার একজন রেফারির হলুদ কার্ডের তালিকায় নাম লেখিয়েছেন।