বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: বারবার শোনা গিয়েছিল, রাজ্য বিজেপির সভায় তিনি আসছেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের কাজের চাপ, নানা কারণে তাঁর বাংলায় আর আসা হয়ে ওঠেনি। অবশেষে শোনা গেল, বাস্তবিকই তিনি রাজ্য বিজেপির সভায় যোগ দিতে আসছেন। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, ৫ এবং ৬ নভেম্বর অমিত শাহ রাজ্য সফর করবেন। তবে তাঁর এই সফর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নয়, বরং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবেই।
দুর্গাপুজো শেষ হতেই শোনা গিয়েছিল, বিজেপির সর্বভারতীয় জেপি নাড্ডা রাজ্যে আসবেন। নভেম্বরের শুরুতে তিনি রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কলকাতায়। যাবেন শিলিগুড়িতেও। এ ছাড়া মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, আসানসোল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূমের নেতাদের নিয়েও দুটি বৈঠক করার কথা ছিল তাঁর। একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল মেদিনীপুরে এবং অপরটি বর্ধমানে। কিন্তু শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি জানিয়ে দেন, জেপি নাড্ডা আপাতত রাজ্যে আসছেন না। অনিবার্যকারণবশত তাঁর এই সফর স্থগিত রাখা হয়েছে। তিনি পরে কোনও সময় রাজ্যে আসবেন। তখন বৈঠকগুলি হবে। বিজেপি সূত্রে খবর, তাঁর রাজ্যে আসার সম্ভাব্য সময় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। পাশাপাশি বৃহস্পতিবারই বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু জানিয়েছিলেন, তাঁরা অমিত শাহকে রাজ্যে আসার জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
দিলীপ ঘোষ শুক্রবার পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ৫ নভেম্বর অমিত শাহ বাংলায় আসছেন। ৬ নভেম্বর রাতে তিনি দিল্লি ফিরে যাবেন। দু’দিন তিনি রাজ্যে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক যেমন করবেন, তেমনই দলের সভায়ও যোগ দিতে পারেন। এদিন দিলীপ ঘোষ মল্লারপুরে একটি রহস্যমৃত্যুর ঘটনার খবর পাওয়ার পরই সেখানে রওনা হন। উল্লেখ্য, মল্লারপুর থানার লকআপে শুভ মেহেনা নামে এক নাবালকের রহস্যমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাকে বারুইপাড়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল। রাতে তার মৃত্যু হয়। তার পরিবারের অভিযোগ, থানার ভেতরে তার ওপর অমানুষিক অত্যাচার করে পুলিশ তাকে মেরে ফেলেছে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পর এদিন সকাল থেকেই সেখানকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ক্রমে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা মল্লারপুর।
পুলিশের অবশ্য দাবি, থানায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে শুভ। কিন্তু পুলিশের দাবি উড়িয়ে দিয়ে মল্লারপুরে যাওয়ার আগে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘পুলিশ রাজনৈতিক রং দেখে তদন্তের কাজ করছে। তৃণমূলের ক্যাডারের মতো রাজনৈতিক আচরণ করছে। বিজেপি সমর্থক হওয়ার জন্যই ওই কিশোরকে পুলিশ খুন করেছে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘থানায় গামছা নেই, দড়ি নেই। তা হলে লকআপে আত্মহত্যা সে করল কী করে? পুলিশ কি মৃত্যু নিয়ে ইয়ার্কি মারছে? মানুষকে কি মূর্খ ভাবছে?’ ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপির তরফে শনিবার মল্লারপুরে ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। মল্লারপুরে গিয়েছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁও। ঘটনার জন্য শাসক দল তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। তিনি এই ঘটনাকে পরিকল্পিত খুন বলে উল্লেখ করেছেন।