আমার দেখা বকুল ভাই : আমাদের বকুল ভাই।
আমিনুল ইসলাম বকুল ভাই। যদিও সামাজিক প্রথা অনুযায়ী আমার ‘বকুল কাকা’ বলা উচিত। সকলের ‘ভাই’ হয়ে ওঠার জন্মগত প্রতিভার কারণেই তিনি আমারও ‘বকুল ভাই’। প্রাইমারিতে পড়ার সময় যখন ‘জয়বাংলা’ স্লোগান তুলে গৌরাঙ্গবাজার মেইন রোড ধরে মিছিল যেতো তখন আমরা বাচ্চারা দৌড়ে উজ্জ্বল ফার্মেসীর ভেতর দিয়ে দেখতে আসতাম আমাদের বকুল ভাইকে। কারণ সারাদিন তাকে আমরা অন্যরূপে দেখে থাকি; কেউ অসুস্থ, হাসপাতাল নিতে হবে-বকুল ভাই, ছেলেরা দলবেঁধে আজিমুদ্দিন স্কুল মাঠ বা ঈদগাহ মাঠে খেলতে গেছে সকালে এখন দুপুর পার হয়ে গেলেও কেউ ফেরেনি- বকুল ভাইকে খবর দে, ফুটবল খেলব সবই আছে কিন্তু ফুটবলটাই নাই, কোথায় পাব-বকুল ভাই, কারও স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ার এক ঘণ্টা পরও বাসায় আসেনি? বকুল ভাইকে খবর দে। সকাল থেকে রাত অবধি সারাক্ষণই চোখের সামনে আমরা এক বকুল ভাইকে দেখি। তাই তাকে মিছিলে দেখার বা নেতৃত্ব দেওয়া অবস্থায় দেখার একটা ‘বুকটান’ গৌরব আমরা ছোটবেলা থেকেই ধারণ করতাম। সত্যি কথা বলতে, বকুল ভাইয়ের বাসা যে আঠারবাড়ী কাচারির ভেতরে সেটা আমরা ছোটরা বড় হওয়ার পর বুঝেছি।
আমরা ছোটরা তখন আওয়ামী লীগ বুঝতাম; কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ বুঝতাম না। আমাদের কাছে বকুল ভাই-ই ছিলেন সব লীগ। ‘জয়বাংলা’র যাবতীয় কার্যক্রম বকুল ভাইকেই করতে দেখতাম। কয়দিন পরপর পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, আবার তিনি ফিরে আসেন। যেহেতু আমাদের ছেলেবেলা বলতে যেটাকে বোঝায় সেটা পুরোটাই স্বৈরাচার এরশাদের যুগ ছিল। তখন কিশোরগঞ্জের রাজপথ ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের দখলেই ছিল বলা যায়। আমাদের কাছে মনে হতো বকুল ভাইয়ের দখলে। হরতালের দিন কাকভোরে বকুল ভাইকে দেখেছি টায়ার জ্বালাতে, পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় নেতৃত্ব দিতে, কিংবা কাউকে পুলিশ ধরে ফেললে পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করে পিকআপ থেকে নামিয়ে আনতে।
একুশে ফেব্রুয়ারি, প্রভাতফেরিতে যেতে হবে; সারারাত টানটান উত্তেজনা। তখনও আলো ফোটেনি, পরিবার থেকে একা বের হতে দিবে না, তেমনই সময় বকুল ভাইয়ের ডাক, আর কে বাধা দেয়! প্রভাতফেরিতে যাওয়া থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত বকুল ভাই দৃষ্টির আড়াল করতো না।
এই গণমানুষের নেতা বকুল ভাই তার কৈশোর-যৌবন বিনাদ্বিধায় বিলিয়ে দিয়েছেন গণমানুষের দল আওয়ামী লীগের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য। তার প্রাণের দল এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে উন্নয়নের বার্তা বা সুফল সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে প্রয়োজন তৃণমূলের সাথে সম্পৃক্ত জননেতা। আমিনুল ইসলাম বকুল ভাই যাদের একজন।
তাই বকুল ভাইকে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে নৌকার মাঝি হিসেবে দেখতে চাই।
লেখক:ফুয়াদ ইব্রাহিম বুলবুল।