ডেস্ক রিপোর্ট:ডা. ফজলুল করিম একজন সফল চিকিৎসক, আদর্শ সমাজকর্মী, অগ্রসর চিন্তার রাজনীতিক ও কৃতী ক্রীড়াবিদ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। তাঁর পিতার নাম ইব্রাহীম ভূঞা ও মাতার নাম রওশন আরা বিনু।
ডা. করিম ছেলেবেলাতেই তাঁর বাবা ও মাকে হারান। চাচা আবদুল আহাদ ভুঁইয়ার কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ শেষে তিনি কোদালিয়া এস.আই. হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৪৫ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিক, ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।
ছাত্রজীবনেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। তিনি নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ ও ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক কারণে তিনি কারাবরণ করেছেন।
১৯৭৫ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ভাসানী) যোগদান করেন ও ১৯৭৬ সালে এর কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব নেন। এ সময় তিনি ন্যাপ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য পদ লাভ করেন।
জনসম্পৃক্ততা ও সাংগঠনিক কর্মতৎপরতার কারণে তাঁকে বিএনপি সদর আসনে নির্বাচনের জন্য (১৯৭৯) মনোনীত করে। ওই সাধারণ নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ সদর আসনে জয়লাভ করেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য করেন এবং তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। পরে তাঁকে ১৯৮০ সালে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় ও ১৯৮২ সালে আবার তাঁকে পূর্বের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় দেয়া হয়।
পরবর্তীকালে বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হলে তাঁকে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী করা হয়। মন্ত্রণালয় পরিচালনাকালে তাঁর সততা ও নিষ্ঠার কথা আজো অনেকেই স্মরণ করেন।
পেশাগত জীবন শুরুর সময় তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হয়। ডাক্তারি পাস করে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা পাস করা সত্ত্বেও তাঁকে চাকরিতে যোগদান করতে দেয়া হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
তিনি ১৯৮০ সালে থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। তাঁর সময় নিয়াজ মোর্শেদ দাবায় গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব লাভ করেন। তিনি নিজেও একজন ভালো ফুটবলার, লন টেনিস খেলোয়াড় ও কৃতী দাবারু ছিলেন। অহংবোধহীন, সুন্দরমনা ও সৎ ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন সকলের নিকট পরিচিত।
এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির কিশোরগঞ্জের ডেলিগেট এবং ১৯৭৮-৭৯ সালে দুই বার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
১৯৭৯-৮৭ সালে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির কেন্দ্রীয় ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ১৯৭৯-৮২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ডা. ফজলুল করিম ছিলেন কিশোরগঞ্জের একজন কৃতী সন্তান। তাঁর কর্মময় জীবন, নিষ্ঠা ও সততা সকলের জন্য আদর্শ ও অনুপ্রেরণাদায়ক। এই মহৎপ্রাণ কৃতী ব্যক্তিত্ব ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ এপ্রিল সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।