নিজস্ব প্রতিবেদক: পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে গায়ের জোরে স্বৈরাচার বলা হয় মন্তব্য করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন প্রকৃত গণতন্ত্রমনা রাষ্ট্রনায়ক। আদালত পল্লীবন্ধুকে বৈধ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি বৈধ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। তাই কোনোভাবেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বৈরাচার বলা যাবে না।
জিএম কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামনে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সুযোগ ছিল। কিন্তু পল্লীবন্ধু গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় সংবিধানকে সমুন্নত রেখেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। পল্লীবন্ধু ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকে দেশ উল্টো পথে হেঁটেছে। ’৯৬ সালের পর থেকে পরপর চারবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা বেড়েছে। পল্লীবন্ধুর জাতীয় পার্টির শাসনামলে হত্যার রাজনীতি ছিল না।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। সংবিধানে ৭০ ধারা সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল স্বাদ ধ্বংস করেছে।৭০ ধারার কারণে সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারে না। তাতে সরকারপ্রধান যা করতে চায় তার বাইরে কিছুই করা সম্ভব হয় না। তাই ৭০ ধারার কারণে সরকারে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়, যা স্বৈরতন্ত্রের পর্যায়ে। তাই সংসদীয় পদ্ধতির প্রকৃত স্বাদ রক্ষা করতে ৭০ ধারা বিলুপ্ত করতে হবে অথবা অন্য কিছু ভাবতে হবে সরকার পদ্ধতি নিয়ে। ৭০ ধারা বিদ্যমান থাকায় নির্যাতন ও দুর্নীতি বেড়ে যায়। সুশাসনের অভাব হয় এবং আইনের শাসন কার্যকর করা যায় না।
১৯৯১ সালের নির্বাচন পদ্ধতির সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, ৯১ সালে জাতীয় পার্টির জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের জেলে আটকে রাখা হয়েছে। প্রচার-প্রচারণা করতে দেয়া হয়নি জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের। জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করতে চেয়েছিল তারা। জাতীয় পার্টিকে মাঠেই থাকতে দেয়নি ’৯১ সালের নির্বাচনে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় জাতীয় পার্টি প্রতিকূল পরিবেশেও ৩৫টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। জেলে থেকেই পল্লীবন্ধু ৫টি করে আসনে বিজয়ী হয়েছেন ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে।
তিনি বলেন, আমরা পল্লীবন্ধুর আদর্শে নতুন বাংলাদেশ গড়ে দেশের মানুষকে মুক্তি দেব।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই ডা. মিলন ও নূর হোসেনকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৩০ বছরেও ডা. মিলন ও নূর হোসেনের হত্যার বিচার হয়নি। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই এই ষড়যন্ত্রমূলক হত্যার বিচার করবে। তিনি বলেন, কেউই ক্ষমতা ছাড়তে চায় না- কিন্তু পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রক্তপাত চাননি বলেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন।
এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ১৯৯১ সালে তিন জোটের রূপরেখায় মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের লালন করা হয়েছে। ’৯১ সালের নির্বাচনেই নিজামী ও মুজাহিদকে এমপি বানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ভোটাধিকার নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। নির্বাচনের ওপর আস্থা নেই দেশের মানুষের। তছনছ হয়েছে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা। আমরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চাই। বাবলু বলেন, সরকার খুন, গুম, হত্যা ও ধর্ষণ বন্ধ করতে পারছে না। অথচ মাত্র ১ মাসের মধ্যে আইনের শাসন কার্যকর করে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশ থেকে এসিড সন্ত্রাস নির্মূল করেছিলেন। তিনি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতেই আমাদের রাজনীতি।
কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশের মানুষকে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ দিয়েছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন, প্রতিহিংসার বসে পল্লীবন্ধুকে আর স্বৈরাচার বলা চলবে না। পল্লীবন্ধু এদেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরেই গণতন্ত্রের মানসপুত্র হচ্ছেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বঙ্গবন্ধুর পরে পল্লীবন্ধুর উন্নয়ন ও সুশাসন ইতিহাসের পাতাই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, আব্দুস সাত্তার মিয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মিসেস শেরিফা কাদের, মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম রুবেল, মেহেরুন্নেসা খান হেনা, ভাইস চেয়ারম্যান আদেলুর রহমান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, কৃষক পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পার্টির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ভূঁইয়া, জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি একেএম আশরাফুজ্জামান খান।