সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদ জানতে রোববার (২১ ডিসেম্বর) সারাদেশে দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ অথবা কালো পোশাক পরবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
গত ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওসহ সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় বেশ কিছু বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান অনির্বিাচিত নতজানু সরকারের দুর্বল নীতির কারণে সীমান্তে হত্যা বিরামহীন ভাবে চলছে বলে বিএনপি মনে করে। মানবিক অধিকার লঙ্ঘন করে এই সকল হত্যাকাণ্ড ঘটার পরেও সরকারের নির্বিকার ভূমিকা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।’
অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয় দলটির পক্ষ থেকে।
কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন “বন্ধনের সোনালি অধ্যায়” রচনা করতে ভার্চুয়াল আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তখন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত বাংলাদেশি নিরীহ দরিদ্র যুবক জাহিদুল ইসলামের লাশ পড়েছিল কাঁটাতারের নিচে। সামিট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন নির্লজ্জভাবে বলেছেন, “সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফাভাবে দায়ী নয়। আমাদের কিছু দুষ্টু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে যায় এবং তাদের কাছে অস্ত্র থাকে। তখন ভারত বাধ্য হয়ে ভয়ে ওদের গুলি করে”।’
রিজভী আরও বলেন, ‘যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা উল্টো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষদেরকে হত্যা করারই ন্যায্যতা দান করছে। এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী। সুতরাং সীমান্ত হত্যার দায় বাংলাদেশ সরকারও এড়াতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রী নন, তারা অন্য কোন দেশের প্রতিনিধি। বর্তমান আওয়ামী সরকারে হরেক কিসিমের ক্রীতদাস ও মোসাহেবে পরিপূর্ণ। বাস্তবে এই সরকারের হাতে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির মৃত্যু ঘটেছে। তারা শুধুমাত্র অবৈধভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রভূদের তোষামোদিতেই ব্যস্ত। ফলে জনগণের জানমাল ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে নিজেদের ক্ষমতাকেই আগলে রাখাকেই বড় কাজ বলে মনে করছে। বিএসএফের নির্বিচারে বাংলাদেশি হত্যার বিরুদ্ধে সরকারিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ তো দূরের কথা, মৌখিক কড়া প্রতিবাদ জানাতেও আমরা কখনও দেখিনি। এটা কেবলমাত্র গভীর বেদনাদায়ক, লজ্জার ও নিন্দনীয়ই নয়, বরং আওয়ামী সরকারের ভ্রষ্টাচার, ক্ষমতালোলুপতারই মনোবৃত্তি। সে কারণেই সরকারের মন্ত্রীরা নিজের জনগণের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার ও প্রতিবেশী দেশের বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যা করতে প্ররোচিত করছেন। জনসমর্থনহীন সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই বিএসএফ এমন দুঃসাহস দেখাতে পারছে।’