প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের আয়োজিত এক জরুরি সভায় ‘হট্টগোল’ সৃষ্টি হয়েছে। দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নির্ধারিত সময়ের পর সভায় উপস্থিত হওয়া, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি হওয়া, ছাত্রলীগ নেত্রী তন্বীর ওপর হামলার ঘটনাসহ নানান বিষয়ে কথা উঠলে ‘হট্টগোলের’ সৃষ্টি হয়।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ছাত্রলীগের দলীয় কার্যালয়ে (২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের একাধিক নেতা জানান, রোববার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সভাকক্ষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ৪৮ মিনিট এবং সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এক ঘণ্টা দেরি করে প্রবেশ করেন। ৪টায় সভা ডেকে কেন তারা দেরি করে ভেতরে প্রবেশ করবেন, তা নিয়ে প্রথমেই হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। তারা প্রতিটি অনুষ্ঠানে ‘দেরি করে আসেন’ অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় নেতারা জয় ও লেখকের ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং এর কৈফিয়ত জানতে চান।
এরপর ছাত্রলীগের শূন্য পদ কেন এতদিন পূরণ হয়নি এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তা পূরণের আশ্বাস দেন। এ সময় কয়েকজন ‘দ্রুত সময়’, ‘দ্রুত সময়’ বলে রসিকতা করেন।
সভায় উপস্থিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলম সভাপতি জয় ও সম্পাদক লেখককে বলেন, ৭৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে যারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে, তাদের আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখতে চাই না। শূন্য পদে এমন কাউকে চাই না যারা বিতর্কিত। কারণ, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে এবং কেউ কেউ অব্যাহতি নিয়ে এই পদগুলো শূন্য হয়েছে।
ফেরদৌস আলমের কথায় সুর মিলিয়ে জয়-লেখক ‘যারা বেশি বাড়াবাড়ি করছে তাদের একটাও পদ পাবে না’ এমন মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কেন কমিটি করা হচ্ছে এ বিষয়ে জয়-লেখক বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপ আছে। তাই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি দেয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেয়ার।
উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা সামনের দিনগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেয়ার দাবি জানান।
কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, আমার জেলায় কমিটি হয় আমি জানি না। আপনারা কিসের ভিত্তিতে তাদের কমিটি দেন? তারা কী করে না করে সে বিষয়ে আপনারা কী এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেন?
সভায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান রোকেয়া হলের এজিএস ফাল্গুনী দাস তন্বীর ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শামস ই নোমান উচ্চস্বরে সোহান খানের কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, মারধরের জন্য যদি নিশিকে শাস্তি দিতে হয়, এর আগে সিনিয়রকে গালি দেয়ার জন্য তন্বীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তখন শামস ই নোমান কেন একজনের কথা শেষ না হওয়ার আগে কণ্ঠ উঁচু করেছেন এর প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় উপ-সম্পাদক মেশকাত হোসেন বলেন, থামেন! একজন কথা শেষ করার আগে কেন কথা বলবেন। তার কথা শেষ করতে দেন।
মেশকাতকে নোমান ‘উপ-সম্পাদক বলে হেয় করলে’ সভায় উপস্থিত ছাত্রলীগের অনেক নেতা নোমানের কথার প্রতিবাদ করেন। এবং মেশকাতকে সমর্থন দেন। এতে সভায় চরম হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ সময় জয় ও লেখক সবাইকে শান্ত হতে বললে কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমরা হামলার বিষয়ে জেনেছি। হামলাকারী যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিব। আর লেখক বলেন, তন্বী এখন একটু ট্রমায় আছে। সে সুস্থ হলে এ বিষয়টি সমাধান করব।
এরপর পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা ১৩ পিস ইয়াবাসহ আটক হলে তার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান৷ তখন জয়-লেখক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান বলেন, আমি তদন্ত করেছি এবং সব প্রমাণসহ সভাপতিকে দিয়েছি। এ সময় জয়-লেখক কথা না বাড়িয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বাস দেন।
সভায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান জয় ও লেখককে কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোন রিসিভ না করার কারণ জানতে চাইলে জয় ‘ভাইয়া…’ বলে এড়িয়ে যান।
গঠণতন্ত্র লঙ্ঘন করে জরুরি সভা
ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী কোনো জরুরি সভা করতে হলে ২৪ ঘণ্টা আগে তা আহ্বান করতে হবে। কিন্তু ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সভার দিন রাত (২৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ২ টা ৫২ মিনিট) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে জরুরি সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে অনেক নেতা ঘুমিয়ে যাওয়ায় সকাল বেলা উঠে সেই বার্তা দেখতে পান। তাই অনেকে ইচ্ছা সত্ত্বেও সভায় উপস্থিত থাকতে পারেরনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম জাগো নিউজকে বলেন, আমি চাঁদপুর আসছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি জরুরি সভার উপস্থিত থাকার জন্য ম্যাসেজ আসে। এটা যদি ২৪ ঘণ্টা আগে জানানো হতো তাহলে আমাদের অনেকে সভায় আসতে পারতাম।
মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়া নিয়ে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, বিলম্ব করার অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা যথা সময়ে উপস্থিত হয়েছি।
সভায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে লেখক ভট্টাচার্য জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাসে এমন শান্ত সভা এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি
৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্ত থাকবেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় র্যালি হবে না। এবার দলীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন, শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হবে।