সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখা গল্প,লন্ডন:
২০১০ জুলাই মাসের মাঝামাঝি হবে, নতুন বাসার দরজার চাবি হাতে নিয়ে ৪ বাচ্চা সহ এলাম টেম্পোরারি এক বাসায়, আগের বাসায় তখনো ফার্নিচার রয়ে গেছে, তবে কাউন্সিল সিল করে গেছে ইনভেস্টিগেটের জন্য, কাপড় চোপড় দরকারী কিছু জিনিষ আর টিভি ফ্রিজ নিয়ে মুভ হলাম আমি নতুন বাসায়!!! চাবি হাতে দরজার সামনে, ! হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো পাশ দিয়ে, শরীরের লোম গুলো দাঁড়িয়ে গেলো, অজানা ভয় আমাকে আগাম জানিয়ে দিলো কিছু একটা আছে ঐঘরে, একি !!চাবি দিয়ে দরজা কেনো খুলছে না!!!
আমার সামনেই তো সকালে এস্টেট এজেন্টের মানুষরা, দরজা খুলে ঘর দেখালো এবং চাবি দিয়ে গেলো আমার হাতে, এখন বাচ্চাদের নিয়ে বাকী জিনিষ নিয়ে এলাম কিন্তু দরজা খুলছেনা কেনো!!! অনেক কষ্টে চাবি নাড়াচাড়া করতে করতে,ফাইন্যালী দরজার চাবি ঘুরলেও দরজা খুলছেনা, মনে হচ্ছে কেউ যেনো ভেতর থেকে ধরে রেখেছে, তারপর বিসমিল্লাহ বলে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুললাম, শরীর আবারও ঝাকুনি দিলো , জানিয়ে দিয়ে গেলো কিছু একটা আছে এ ঘরে,
কাপড় চোপড়ের ব্যাগ গুলো উপরের রুম গুলোতে রেখে নীচে নেমে এলাম রান্না ঘরে, ফ্রীজের মাংস গুলোকে তাড়াতাড়ি আবার ফ্রিজে না রাখলে বরফ গলে যাবে, ব্যাগ খুলে রাখছি এমন সময় ছোট ছেলে বয়স তখন ৩ বছর, টয়লেট করবে, তাই উপরে নিয়ে গেলাম পটি বের করে তাকে বসিয়ে নীচে চলে এলাম এবং বললাম শেষ হলে আমাকে ডাকতে, কিছুক্ষণ পর ছেলের ডাক……. Mum! Mum im finished! রান্না ঘরের বেসিনে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুলাম কারন তাকে পরিষ্কার করতে হবে, বলে রাখি যে মাছ মাংস গুলো ফ্রিজে রাখছিলাম সেগুলো আগের ঘরের ফ্রিজ থেকে আনা, তাই জমে আছে, কাঁচা লাল রক্ত মাংসে লেগে থাকার কোনো সুযোগই নেই, উপরে গিয়ে ছেলেকে টয়লেটে বসিয়ে পরিষ্কার করে পটিটা হাতে নিতে গিয়ে দেখি ..
পটির যেখানে ধরবো সেখানে লাল টকটকে কাঁচা রক্ত দিয়ে চার আঙ্গুলের ছাপ, দেখেই একটু চমকালেও ভাবলাম হয়তো হাত ভাল করে ধুইনি আমি, বলে মনকে বুঝ দিলাম, যাইহোক খাওয়া দাওয়া শেষে রাতে সবাই উপরে গেলাম ঘুমাতে, আমার মেয়েকে দিলাম সিঙ্গল ছোট রুম, ৩ ছেলেকে বড় রুমে আর আমি আরেকটা রুমে( সেই সময় আমার হাসবেন্ড এক্সিডেন্ট করে কোমর ভেঙ্গে ফেলেন এজন্য হাসপাতালে ছিলেন, আর আগের বাসাও ৩ তালা ছিল, সেই সাথে লিফ্ট নেই , যে কারনে বাসা বদল, কারন আমার স্বামী শিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারবেন না অনেকদিন,
যাই হোক সবাই ঘুমিয়ে গেছি, রাত ১২টা হবে হঠাৎ ধুড়ুম করে একটা শব্দ হলো, মনে হলো বস্তায় অনেক মাল রেখে উপর থেকে কেউ ফেলে দিলে যে শব্দ, সেটা আমার নীচে রান্না ঘর থেকে আসছে, আমি আমার রুম থেকে বের হয়ে প্রথমে গেলাম ছেলেদের রুমে দেখি সবাই জেগে গেছে, বললাম কিছু শুনছো? দুই ছেলে বললো হ্যাঁ কিছু পড়ার শব্দ, সমান মেয়ের রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম , সেও একি উত্তর দিলো, তখন বাথরুম থেকে আমি নিলাম মপের ডান্ডা, ছেলে নিলো ব্রুমের ডান্ডা, আর মেয়ে হ্যাংগার নিয়ে নীচে গেলাম, ( তখন বড় ছেলের বয়স ১২, মেয়ে ১১, মেজো ছেলে ৭)
তন্ন তন্ন করে কোথাও কিছু খুঁজে পেলাম না, পরদিন সকালে স্বাভাবিক ভাবেই সবাই উঠলাম , খেলাম রান্না করলাম, আনপ্যাক কাপড় যার যার আলমারীতে রাখলাম, মোট কথা সারাদিন ঘর গুছানোতে ভুলে গেলাম গতকাল কি কি ঘটেছে, বিকালে বাচ্চাদের নিয়ে লিভিং রুমে বসে আছি সোফায় পাশাপাশি বড় ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে, ছোট ছেলে পায়ের কাছে ছোট ছোট গাড়ী দিয়ে খেলছে আর গল্প করছে একা একা, আমি লক্ষ্য করলাম মনে হচ্ছে সে যেনো পাশে বসে থাকা অদৃশ্য কারো সাথে কথা বলছে, এমন সময় মেজো ছেলে নীচে নেমে এলো এবং দাঁড়িয়ে টিভি দেখতে লেগে গেলো , সে যে জাগায় দাঁড়িয়েছিল তার দুহাত পিছনে ওয়াল আর কিছু নেই ফাঁকা জাগা, হঠ্যাৎ সে লাফিয়ে উঠে বলতে লাগলো…………….চলবে
লেখিকা:ফাতেমা ফেরদৌস রেসিম