পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং সাইনের কেলেঙ্কারি তদন্তে ৬১টি বিও হিসাবের তথ্য তলব করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এসব বিও হিসাবের তথ্য চেয়ে সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) চিঠি দেয়া হয়েছে।
তথ্য চাওয়া ৬১টি বিও হিসাবের মধ্যে রয়েছে : ইকোনো বার্টন অ্যান্ড এক্সেসরিস- বিও হিসাব নম্বর ১২০৫০০০০৫৮৫৮৮৪২৫, গ্রী মোহন রায় ১২০৩৬১০০৬৭৯২০১৫৬, মো. আব্দুল কাইয়ুম মামুন ২০৫৮৮০০৬৮০৫০৮২৬, সাজেদুল মাবুদ খাবির ১২০৫২০০০৪৮৪৯৫৩৪১, মো. আবুল খায়ের মানিক ১২০৫২০০০৪৮৪৯৫৩০৯, নাজমুল শাখাওয়াত হোসেন ১২০৩৬১০০৬১৪৯৩২৪৩, রেজওয়ানা রহমান রিমি ১২০৩০৬০০৫৩৮১১৯৭০, নাজনীন আক্তার বানু ১২০৩০৬০০৫৩৮১১৫৯০।
আরও রয়েছে, হোসনে আরা বেগম ১২০৫২০০০৬৬৪৮১৮৮২, মো. আব্দুল কুদ্দুস আমিন ১২০৫০০০০৫৩৭৭৪৯৬৬, ইমরান রহমান ১৬০৬০৬০০৬৮০০৬৮৩৫, লুৎফুন নেসা বেগম ১২০১৯৬০০৫৩৮১১৯৮৯, মো. আরিফ বিল্লাহ ১২০৫২০০০৪৮৪৯৫৩১৭, আব্দুল মান্নান ১২০৫২০০০৬১৪৯৩১৬১, মোহাম্মদ আরশাদুল আমিন ভুইয়া ১২০৫২০০০৬১৫১৮২৫৯, মো. মঞ্জুরুল ইসলাম ১২০৩৬১০০৬১৪৯২১৭৩, মো. আবুল কাশেম ১২০৫২০০০৬১৪৯২২৪৮, মো. মাসুদ হোসেন রানা ১২০৩৬১০০৬১৪৯২২৬৪, শেখ আতাউল হক ১২০৫২০০০৬১৪৯৩৬০৬, মো. জান্নাতুল ইসলাম ১২০৫২০০০৬১৪৯৩৬১৪, মো, আব্দুর রাজ্জাক ১২০৫২০০০৬১৪৯৩৬২২, মো. আতিকুর রহমান ১২০৫২০০০৬১৪৯৩৬৩০, ফিরোজা বেগম ১২০৩৬১০০৬১৫১৮১৪১, জাকিয়া খোন্দকার ১২০৩৬১০০৬১৪৯২২৩১, মনিরা খোন্দকার ১২০৩৬১০০৬১৪৯২২১৩, জাহাধা খোন্দকার ১২০৫২০০০৬২১৪৯৮২২, সৈয়দা শামসুন্নাহার ১৬০৬০৬০০৬৮০০৬৩৯৯, মোহাম্মদ আনোয়ার জাহিদ ভুইয়া ১২০৫২০০০৪৮৪৬৮৫১৭, সংকর কুমার পাল ১২০৩৬১০০৬৬০৩১২৩৬, মিস উম্মে সালমা ১২০৩৬১০০৬৫২৮১৬৪২, ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টস লিমিটেড ১২০১৬৩০০৬৬৩৭৫১০০, মো. মোস্তফা হাসান ১২০১৮৩০০৬২৮৯৭৫৪৪, মো. মিজানুর রহমান ১২০৩৬১০০৬৬৩৬৫৯৭৩, মো. হুমায়ূন কবির ১২০৫২০০০৬৬৩৫০১২১, মো. আরিফ হোসেন ১২০৪৫৭০০৬৩৬৪৪৭৫৫।
এছাড়াও আছে, মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির ১২০৩৬১০০৬৬৩৮২৪৯৫, মো. আনিসুর রহমান ১২০৩৬১০০৬২০০৮২২০, সুদীপ বনিক ১২০১৮৩০০৫৮৪৬৯৬৫৪, মো. কবির উদ্দিন আহমেদ ১২০৪৭৩০০৫৮৯৭০১১০, এবিএম তানভীর হোসেন ১২০২৮৩০০৫২৯১১৭৪১, মো. ফয়সাল আহমেদ ১২০৩০৪০০৫৮১৭৫৮১৮, রুহুল কুদ্দুস সৈকত ১২০২৮৩০০৫২৮৬৪০২৬, আসিফ ইকবাল চৌধুরী ১৬০৫৫৫০০৫৯৭৫৮৬৭১, মো. সারোয়ার হোসেন ১৬০৫৫৫০০৬১৬৭৪২৬৬, মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী ১২০৫১৫০০৫৫১৫০৩৮৭, মিসেস তাসলিমা বেগম ১২০৩৬১০০৪১৩৬৯৯৮৩, চুমকি খাতুন ১৬০৬০৬০০৬৮০০৭১৪৪, মো. তানজিল ১২০১৫৯০০৬৫৮৮৪৭৩৯, নিয়াজ আল ফুয়াদ ১২০১৮৩০০৬৬৪২৭৬৭১, পরীক্ষিত প্রসাদী ১২০১৮৩০০৬৬৪১৭০৯৪, পানু বেগম ১২০১৭৩০০৬৮৬৮১৮২৩৫১, দিল আফরোজ ১২০১৮৩০০৬৮০৭০৯৩৮, মো. সৈয়দ ১২০১৮৩০০৬৬৪১৭০০০, গোলাম আজম চৌধুরী ১২০৫২০০০৬২১৪৯৮১৪, একেএম আতিকুর রহমান ১২০৩৬১০০৬৫৯৩৮৩১১, মো. মাহফুজুল ইসলাম ১২০২১৪০০১৫০৭০৬৭৩, পারভীন আক্তার ১২০১৫৮০০৬৬৪৫০১৮২, গোপাল চন্দ্র বসাক ১২০৩০৯০০২৯৭৭৮০২৮, মিসেস শাহনাজ পারভিন ১৬০৬০৬০০৬৮০০৬৯৬৯, এবিএম গোলাম মোস্তফা ১২০৪৭৮০০৪০১৪৩০৫১ এবং লার্ক টেক্সটাইল লিমিটেড ১২০১৬৩০০৬৬৩৭৫৭১৩।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রিং সাইনকে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার অনুমোদন দেয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয়, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করতে শেয়ারবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে।
তবে আইপিও আবেদন গ্রহণের পর ডিএসইর পর পর দুটি পর্ষদ সভাতে রিং সাইন টেক্সটাইলের আইপিও অনুমোদন পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ডিএসইর পক্ষ থেকে বলা হয়, অস্তিত্বহীন ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির নামে রিং সাইন টেক্সটাইলের প্রায় ২৫ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। রিং সাইন টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইউনিভার্স নিটিংয়ের চেয়ারম্যান পদে আছেন, যা অনৈতিক। এ বিষয়ে ডিএসই থেকে বিএসইসিতে একটি অভিযোগও দেয়া হয়। সেই সঙ্গে কোম্পানিটির তালিকাভুক্তিও আটকে দেয় ডিএসই।
কিন্তু ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর কমিশন সভা করে বিএসইসি জানায়, বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে রিং সাইন টেক্সটাইল নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মিথ্যা। ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান সুং ওয়ে মিন রিং সাইন টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। বিষয়টি প্রসপেক্টাসের ১৯৫ পৃষ্টায় উল্লেখ করা আছে।
এছাড়া ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির নিয়মিত পরিচালনায় সক্রিয় থাকার প্রমাণাদি কমিশনে পাঠায় রিং সাইন। এতে কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি। যাতে বিষয়টি সভায় ডিসক্লোজার ভিত্তিতে সমাধান হয়েছে।
তবে শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে রিং সাইন টেক্সটাইলের এমডির স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টস কর্তৃক রিং সাইনের ধারণ করা শেয়ারে ১ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর লক-ইনের শর্তারোপের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চাপাচাপিতে এক পর্যায়ে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই এবং ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে বছর না ঘুরতেই কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পুনরায় উৎপাদন শুরুর মাধ্যমে ব্যবসা উন্নয়নের জন্য কোম্পানিটির পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি।
এই সাত স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন- পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মেজবাহ উদ্দিন (পিআরএল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্সের অধ্যাপক মোহাম্মদ সগির হোসাইন খন্দকার, জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফোরোজ আলী, পাওয়ার গ্রিডের স্বতন্ত্র পরিচালক ইসতাক আহমেদ শিমুল এবং অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেসের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আব্দুর রাজ্জাক।
পর্ষদ ভেঙে সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া ছাড়াও কোম্পানিটির অনিয়ম অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথ, উপপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মজুমদার এবং মো. ইকবাল হোসেন।