কদিন পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রমজান শুরুর আগেই হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। প্রতি বছর রমজান শুরুর আগেই যেনো অভিনব কারসাজিতে নামে কতিপয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। মাস পনের দিন আগে থেকেই অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সিলেটের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা। তবে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার কারসাজি রোধে সব ধরনের প্রয়াজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বন্দরবাজারের কালিঘাট ঘুরে দেখা গেছে, আসছে রমজান মাসকে টর্গেট রেখে পণ্যের দাম উঠা-নামা করছে। আর অভিনব এ কৌশল নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে সিলেটের কমপক্ষে ১২ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এরই মধ্যে ভোজ্য তেল, চাল, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, রসুন, চিনি এবং খেজুরসহ রমজানের অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা।
গত ১৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৯ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আর পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা দরে। ছোলার কেজি ৬২ টাকা, মসুর ডাল ৬৮ টাকা, আদা ৬০ টাকা, রসুন কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম মণপ্রতি বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, কেজিতে ৬৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খেজুর আরিচা ৪০০, বড়ই ৩৪০, জিয়াদা ২৪০ এবং সর্বনিম্ন ইরাকী খেজুর ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই দশা চালের বাজারে। মিনিকেট চাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট কেজিপ্রতি ৬০, মিনিকেট আতব ৫৫, মালা ৫০, জিরা সিদ্ধ ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে।
আরও পড়ুন : রংপুরে পলিথিন উৎপাদন, মজুদ ও বাজারজাতকরণে ম্যাজিস্ট্রেট ও র্যাব-১৩ এর অভিযান
হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব দেশীয় বাজারে পড়েছে। তাদের মতে রপ্তানিকারক দেশগুলোতে উৎপাদন কমে গেছে। বিশ্ব বাণিজ্যের অবস্থাও আগের মতো নেই। তাই গত কয়েক মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ওঠা-নামা করছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আ ন ম বদরুদ্দোজা বলেন, ‘রমজান মাসকে সামনে রেখে যাতে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়াজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী ২৬ মার্চের পরে বাজার কারসাজি রোধে চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।’
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, ‘রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেম্বারের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। পাশাপাশি রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কারসাজি যাতে না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হয়েছে।’
ব্যবসায়ী নেতা বাবুল আহমদ বলেন, ‘রমজান মাসকে টার্গেট করেই কারসাজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়েছে কতিপয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তারা ভিন্ন কৌশলে এবার রমজান শুরুর পনের দিন আগে থেকেই বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৬০০ টাকা।’
আরেক ব্যবসায়ী সতন দাশ বলেন, ‘রমজান কিংবা কোনো উৎসবের আগেই প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তাই কৌশলে এবার রমজান শুরুর আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন : গুজবে টালমাটাল শেয়ারবাজার