1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

পঞ্চভূতে বিলীন স্তব্ধশঙ্খ

  • Update Time : বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১
  • ৫০৫ Time View

বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: ‘গহ্বরে মিলিয়ে যায় স্বর। স্তব্ধ শ্বাস। তার পর তিনি ফিরে তাকালেন আমাদের দিকে। বললেন, এবার আসুন এক শতাব্দী আমরা নীরব হয়ে দাঁড়াই—।’
সাহিত্য জগৎকে বাকরুদ্ধ করে অনন্তের পথে যাত্রা করলেন শঙ্খ ঘোষ। বুধবার বিকেলে নিমতলা মহাশ্মশানে তাঁর নশ্বর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়। কোনও রকম তোপধ্বনি ছাড়াই সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় এই প্রথিতযশা শব্দ–শিল্পীর।
গত সপ্তাহেই তঁার শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ ছাড়াও নানা বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন শঙ্খ ঘোষ। বাড়িতেই পুরোপুরি আইসোলেশনে ছিলেন। কিন্তু তাঁর শরীরে ক্রমশ কমে আসছিল অক্সিজেনের পরিমাণ। শেষে বুধবার সকালেই ঘুমের মধ্যে চলে গেলেন না–ফেরার দেশে। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

মুহূর্তেই তাঁর প্রয়াণ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবাংলা, বাংলাদেশ–সহ সারা পৃথিবীর বাংলা সাহিত্য প্রেমীদের কাছে। প্রত্যেকেরই মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে যান শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। শেষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলেন, ‘‌অত্যন্ত ভারাক্রান্ত বোধ করছি। এই কৃষ্ণগহ্বর সহ্য করতে পারছি না। বহু দিন ধরে দেখছি মানুষটিকে। যুবক বয়স থেকে চিনি, শান্ত, স্থিতধী, কখনও মেজাজ গরম করতেন না। হাসির কথা শুনলেই খিলখিল করে হেসে উঠতেন। তবে নিজে বরাবরই কম কথা বলতেন। এত পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু কখনও কোনও অহঙ্কার তাঁকে স্পর্শ করেনি।’ সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ বলেছেন, ‘শঙ্খদার চলে যাওয়াটা একটা মহীরূহ পতন।’
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পশ্চিমবাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘বাংলা এবং ভারতীয় সাহিত্যে‌ তাঁর অবদানকে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখবে। সোনার অক্ষরে যে সব কবিতা এবং গদ্য তিনি লিখেছেন, তা সর্ব শ্রেণির মানুষকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত। আজ তিনি নেই। তাঁর মৃত্যু সাহিত্য জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠদের আমার সমবেদনা জানাই।’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘বাঙালি সাহিত্যিক এভং সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বিজেতা কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে আমি শোকস্তব্ধ। তাঁর লেখা কবিতার শিল্পগুণ, গভীরতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য মানুষ তাঁকে চিরকাল মনে রাখবে। তাঁর পরিবার এবং গুণগ্রাহীদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই।’

পশ্চিমবাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বলেছেন, ‘কোভিডে প্রয়াত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। প্রবাদপ্রতিম বাঙালি কবি তিনি। পেয়েছিলেন সাহিত্য অকাদেমি এবং পদ্মভূষণ সম্মান। তাঁর মৃত্যুতে আমি শোকাহত। বাংলা সাহিত্যের ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়ে গেল তাঁর মৃত্যুতে।’‌ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একটি নির্বাচনী জনসভা থেকে তিনি বলেন, ‘শঙ্খবাবু কোভিড আক্রান্ত হলেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর অন্ত্যেষ্টি হবে। তবে কবি নিজে আড়ম্বর পছন্দ করতেন না বলে গান স্যালুটের আয়োজন থাকবে না।’
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা বলেন, ‘পদ্মভূষণ সম্মান, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত বাংলার বিখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। তাঁর আত্মার চির শান্তি কামনা করি।’ এ ছাড়া সাহিত্য ও রাজনীতি জগতের বহু মানুষ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘‌উর্বশীর হাসি’‌, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’ কবি শঙ্খ ঘোষের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তাঁর খ্যাতি অনস্বীকার্য। ‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ’ তাঁর লেখা অন্যতম উল্লেখযোগ্য গবেষণাগ্রন্থ। কেন্দ্র হোক বা রাজ্য সরকার, জনবিরোধী নীতি বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার হয়েছেন তিনি। বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। ২০১১ সালে পান ‘পদ্মভূষণ’। দু’বার পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। এ ছাড়াও পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান, জ্ঞানপীঠ পুরস্কারও। অবিভক্ত বাংলার চাঁদপুরে ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। প্রকৃত নাম ছিল চিত্তপ্রিয় ঘোষ।

দেশভাগের সময়ই তাঁর কলম রীতিমতো ঝলসে উঠতে শুরু করে। তার পর দুই বাংলা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেলেও কবির ঝলসানো কবিতার উদ্ভাবন থেমে যায়নি। কবিতার পাশাপাশি অসম্ভব সব গদ্যও লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ এবং জীবনানন্দ দাশের পর বাংলা আধুনিক কবিতার পঞ্চপাণ্ডব যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন শঙ্খ ঘোষও। এই পঞ্চপাণ্ডব হলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু এবং শঙ্খ ঘোষ।

আরও পড়ুন : মিয়ানমারে জান্তার অভিযানে আড়াই লাখ মানুষ ঘরছাড়া

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..